BOOMING BANGLADESH : কাভোলো পর্বত থেকে হেরিটেজ প্রাসাদ আকিলা হয়ে ট্রিয়েস্ট শহরে
এক দিনে তিন দেশ ভ্রমণ - পর্ব - ৪
কাভোলো পর্বত থেকে হেরিটেজ প্রাসাদ আকিলা হয়ে ট্রিয়েস্ট শহরে
ইমরান আহমেদ চৌধুরী
সারারাত তাঁবুতে রাত কাটালাম ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে , রাত ১২ টার পর আস্তে আস্তে তাপমাত্রা নীচের দিকে নামতে থাকে । ব্যাটারি চালিত হিটার টা বেশ ভালই গরম বাতাস দিয়ে আমাদের দুজনকেই বেশ উষ্ণতা দিল । চতুর্দিকে শুধু ভ্যালির মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া বাতাসের তীব্র হাওয়ার শব্দ ছাড়া সব - কৌতুক আর বিভিন্ন মানুষের কথা বলা, এক্টিং করা থেকে একেকজন এর বিভিন্ন গল্প করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম মনেই নাই । হটাত ঘুব ভেঙ্গে গেল একটা দমকা হাওয়ার ঝাপটায় মনে হল যেন তাঁবু টাকে উঠিয়ে ফেলে আমাদের কে উড়িয়ে নিয়ে যাবে পাহাড়ের ঢালুর দিকে । ভীষণ খাঁড়া পাহাড় এর স্লোপ - কোথাও কোথাও প্রায় নব্বই ডিগ্রী খাঁড়া । ভাবতেই ভয় লাগে - আবার ভাবলাম পাহাড়ের ঐ প্রান্ত থেকে আবার বন্য কোন পশু না এসে আবার আক্রমণ করে । প্রতিরক্ষার জন্য কেবল আছে পাহাড়ে উঠার লাঠি দুটো আর রাতে বার বি কিউ করার জন্য খন্তা আর দুটো ৪ ইঞ্চি মাংস আর সবজি কাতার চাকু । আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে পরলাম - বালিশের নীচ থেকে টর্চ বের করে লাঠি নিয়ে বের হয়ে পরলাম তাঁবু থেকে । সেই অনেক বছর পর পাহাড়ে রাত কাটাচ্ছি - চাঁদের আলো আর আধারিতে পাহাড় দেখতে যে কি সুন্দর রাতের বেলা তা যে না দেখেছে তাকে বুঝানো বেশ কষ্টসাধ্য । আকাশে যদিও চাঁদ নাই - প্রায় অমাবস্যার মত কাল তারপর ও সব কেমন যেন পরিষ্কার - মাসুদ রানা বইয়ে পরেছিলাম অন্ধকারে প্রথমে এক চোখ খুলে আর এক চোখ বন্ধ করে রেখে কিছুক্ষণ পর বন্ধ চোখ খুলেই সব পরিষ্কার দেখতে লাগলাম । কিছুই পেলাম না দেখতে । আমার চলাচল শুনে ফ্রেডির ও ঘুম ভেঙ্গে গেল - ওর হাতের মাউনটেন ক্লাইমবিং ঘড়ি দেখে বলল যে , সকাল প্রায় সমাসন্ন ৪৫ মিনিট পরেই ঐ দিক থেকে সূর্য উঠবে । তাঁবু টা থাকুক চলেন সূর্য উদয় টা অবলোকন করে আসি । বললাম চল । প্রায় ৬০০ গজ উপড়ে পাহাড়টার ঐ ছোট্ট চুড়া থেকেই দেখা যাবে সূর্য উঠা দেখা যাবে । তড়িঘড়ি করে কাপড় পরেই বেরিয়ে পরলাম । উপড়ে উঠতে লেগে গেল ৩৫ মিনিট সে এক কঠিন সরু মেঠো পাহাড়ি ট্র্যাক আধো আলো আধো অন্ধকারাচ্ছন - বন্ধুর সেই পথ , অনেক কষ্টে উঠলাম - ওয়াও কি অপূর্ব সে দৃশ - মনে পরে গেল সেই ছোট বেলা আবার সাথে সিলেটের লাঠি টিলা ইপিআর বিওপি থেকে ও সকালে ইন্ডিয়ার ঐ পাস থেকে সূর্য টা পাহাড়ের গা’ ঘেঁষে উঠত লাল একতা অগ্নি গোলক এর মত ; হারিয়ে গেলাম সেই স্মৃতির অতল গর্ভে । কয়েক মাইল দূরে লেক বারচেয এর উপর দিয়ে একটা গ্যাস বেলুনের মত সূর্য টা আস্তে আস্তে ঊর্ধ্ব মুখি হয়ে উঠে আসছে যেন ; সে কি অপূর্ব - সবুজ লেকের পানিতে লাল সূর্যের আলোর বিকিরণ সবুজ এবং লালের সংমিশ্রণ প্রতিচ্ছবিত হচ্ছে প্রিসমের মত । ঢেউ এর সাথে সাথে দুলছে মৃদু ; পকেটে, রাক্সাক, জ্যাকেটের পকেটে হাত দিয়ে দেখি তাড়াহুড়ায় ফোন, ক্যামেরা, ভিডিও সব ই ফেলে এসেছি টেন্টে। ইস এতো সুন্দর একটা ক্ষণের ছবি গুল সেলুলয়েড এ ধরে রাখতে পারলাম না । এই সব করতে করতে সূর্য মামা চোখের নিমিষেই প্রজ্বলিত হয়ে উঠল পূর্ব দিগন্তে । কুয়াসায় ভিজে যাওয়া ঘাসের পাতার চূড়ামণিতে সূর্যের আলোর বিকিরণ জমে থাকা শিশিরের বলয়ে প্রতিবিম্ব হচ্ছে কাঁচের প্রিজমের মত । নেই কোন কোলাহল - প্রকৃতি তার আপন আঙ্গিনায় নিস্তব্ধ এবং আড়মোড়া ভেঙ্গে যেন রাতের বিছানার চাদর টা সরিয়ে জেগে উঠছে - নিত্তনৈমত্তিক কর্মকাণ্ড শুরু করার জন্য। আস্তে আস্তে অতি সন্তর্পণে এক পা দু পা করে নিচে নামতে লাগলাম - পায়ের বুট ছিল না - এডিডাস ট্রেইনার হটাত পিছলে গেল আর সঙ্গে সঙ্গে ফ্রেডী ধরবার আগেই নীচে নেমে গেলাম কয়েক ফুট , তাকিয়ে দেখি আমি ওর থেকে 20 - 3০ ফুট নীচে দুই তিনটা ওলট পালট খেয়ে একটা গর্তে শুয়ে আছি মাথার হ্যাট নাই, পাহাড়ে উঠার লাঠিও নেই, বাম হাত দিয়ে বেশ কনুই এর পাশে বেশ বড় একটা ক্ষত । বাম পায়ের গোড়ালি মনে হল মচকে গেছে । আমার নামতে সময় লেগেছে মনে হয় কয়েক সেকেন্ড আর ওখান থেকে উঠে দাঁড়াতে সময় লাগছে কয়েক মিনিট - ও নেমে আসলো বেশ কসরত করে - তাকিয়ে দেখলাম ও মা গো মা । এ যাত্রা জমের হাথ থেকে রক্ষা পেয়ে গেছি কপালের গুনে । তা না হলে এটা একটা বড় দুর্ঘটনা হয়ে যেত পারতো । সব ঘটে গেলো কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে । উঠে দাঁড়াতে বেশ কষ্ট পেতে লাগলাম । চারিদিকে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলাম লাঠি আর হ্যাট টা । চোখ বুজে কয়েক মুহূর্ত নিজেকে বললাম ব্রেনে মেসেজ পাঠানোর জন্য - ইমরান তোমার কোন ব্যথা নাই কোন ব্যথা নাই - কোন ব্যথা নাই । এক মিনিটে ৫৫ বার বললাম এবং তার পর হাঁটতে লাগলাম । ব্যথা কম অনুভূত হতে লাগল যেন । ইতিমধ্যে ও এসে হাজির ততক্ষণে আমার পাশে । একটু একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তাঁবুর বেইজ ক্যাম্পে নেমে আসলাম ; ট্রেইনার টা খুলে একটু রেস্ট নিলাম- ইতিমধ্যে ও তাঁবু গুটিয়ে ফেলল সব কিছু র্যাকস্যাক ঢুকিয়ে ফেললো । ওর ব্যাগ থেকে একটা স্প্রে বের করে গোড়ালি তে স্প্রে করে দিলো । অল্পক্ষণের মধ্যেই ব্যাথা বেমালুম আলেমুল গায়েব হয়ে গেলো । স্কন্ধে ৮০ পাউণ্ড ওজন নিয়ে পাহাড় বেয়ে নীচে নেমে আস্তে লাগলাম - আধা পথে এসে রোপ ক্যারেজ ওয়ে দিয়ে নেমে আসলাম । গাড়িতে সব কিছু রেখে একটা গরুর খামারের গরুর দুধের বানানো পনির এবং দুধের ক্রিম চা ও গরুর মাংসের সাথে বানানো পনির স্কিলেট দিয়ে প্রাতরাশ সেরে গাড়িতে চেপে বসলাম ততক্ষণে পায়ের ব্যাথা কম ও হাতের রক্ত পরা বন্ধ হয়ে গেছে ।
ওর পোরসে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম দ্রুত গতিতে সকাল সর্বসাকুল্যে কেবল ৭ - ৪৫, রাস্তায় লেক বারচেয এ থামলাম - কোভোলো পাহাড়ের এবং সংলগ্ন সকল পাহাড়ের নিঃসৃত জলরাশি জমে জমেই সৃষ্টি করেছে এই বিশাল লেকের । ওটার পাস দিয়েই আগের আমলের পাহাড় খুঁড়ে সুড়ঙ্গএর ভিতর দিয়ে ওল্ড রোড দেখলাম ; কি বিশাল কাজ- কি ওদের প্রকৌশলীদের মেধা - আর শ্রমিক দের সাহস , হাতুড়ী, কোদাল, বেলচা, সাবল দিয়ে খুদে খুদে বানিয়েছে প্রায় ৫ মাইল দীর্ঘ সুড়ঙ্গ রাস্তা - এক পাশে পাহাড়ের ছাদ আর দেওয়াল আর অন্য পাশে ৩ হাজার ফুট বিশাল পাহাড়ের খাদ - বিশাল সেই খাদ - তাকালেই গা শিউরে উঠে । ঐ ভ্যালী বা কানিওন এর মাঝেই জন্ম নিয়েছে ইতালির অন্যতম প্রধান নদী - যা পারদোনোনা হয়ে কিছু জায়গা শুকিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও প্রবাহিত হয়েছে এড্রিয়াটিক সাগরে । লেকের পাড়েই মাছ এর পোনা ঘুর ঘুর করছে ঝাঁকে ঝাঁকে ; কেউ কণিজাল বা বড়শি দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে না ঐ সব বালি মাছ জাতিয় মাছ গুলোকে। পাহাড়ের বিশাল গহ্বর এর উপর দিয়ে দুটো পাহাড় কে জোড়া লাগিয়েছে একটা দড়ির ঝুলন্ত ব্রিজ দিয়ে - সেই ২ হাজার ফুট উপড়ে এবং এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ের মধ্যে তফাত ২৫০ - ৩০০ ফুট । ঐ ঝুলন্ত ব্রিজ টা পাড় হলাম একা একা হেঁটে হেঁটে কোমরে সেফটি বেল্ট বেধে আর বেল্টের শেষে ক্লিপ গুল দড়িতে লাগিয়ে দেওয়ার জন্য যাতে পা পিছলে পরে গেলোও যাতে একদম দুই হাজার ফুট নীচে যাতে না পরে যায় কেই । হাজার হাজার পর্যটক চতুর্দিকে ; কেউ এসেছে গাড়ী নিয়ে, কেউ কেউ এসেছে হেঁটে হেঁটে তারা হেঁটে হেঁটেই ভ্রমণ করবে ছয় সাত সপ্তাহ ইতালিতে এসেছে ফিনল্যান্ড থেকে, নিউজিল্যান্ড থেকে, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রাঞ্চ বা রাশিয়া থেকে, কেউ বা এই খানেই তাঁবু তে কিংবা মোটর হোম এই থাকবে কয়েক সপ্তাহ আবার অন্যরা এসেছে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কোচ ভড়ে ভড়ে। গরমের যত বৃদ্ধি পাচ্ছে পরিধেয় কাপড় ও তত সংকীর্ণ হচ্ছে । কেউ কারোর দিকে তাকাবার সময় নাই । ঘাসের মধ্যেই প্রেমিক প্রেমিকারা বিকিনি এবং হ্যাফ পেন্ট পরে কড়া রোডে শরীরের চামড়া ঝলসানোর জন্য শুয়ে আছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা । সাইকেলের পিছনে বেয়ারিং এর গাড়ীর মত ট্রেয়াইলার এ বসিয়ে মা বা বাবা দিব্বি সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে । লোকে লোকারণ্য । অগাস্ট মাসে ইউরোপ জুড়ে চলে বাৎসরিক ছুটির মাস ঐ মাসে বাচ্চাদের স্কুল , কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব ৬ থেকে ১২ সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকে । হোটেল, মোটেল, বেড এন্ড ব্রেকফাস্ট , হোস্টেল কোথাও কোন জায়গা পাওয়া সম্ভব নয় । সারা দিন ঘুরে বেড়ায় সব পর্যটক রা আর রাতের বেলা সবাই ভালো দামি কাপড় চোপড় পরে শহরে বেরিয়ে পরে সবাই রেস্টুরেন্ট এ খাবার খেতে, বার বা পাব এ যাবে মদ্য পান ও অন্যান্য দের সাথে সামাজিক আড্ডা মারা এবং গান শুনবে, ডার্ট খেলবে বা কারাওকি তে গান গাবে আর বিয়ার, ওয়াইন, বা স্পিরিট পান করবে - আর যুবক যুবতি রা দল বেধে বেধে শহরের ডিস্কো তে নেচে গেয়ে মদ্য পান করে সেই গভীর রাতে যার যার ঘুমাবার স্থানে ফিরে যাবে আবার সকালে শুরু করে দিবে তাদের ভ্রমণ কার্যক্রম । এক অদ্ভুত সংস্কৃতি আমাদের কাছে হয়ত মনে হয় বা হবে । এই অগাস্ট মাসের জন্য চাতক পাখির মত অধীর আগ্রহে বসে থাকে ইউরোপের সব ভ্রমণ করার মত প্রসিদ্ধ বা নৈসর্গিক স্থান গুলো এবং সমুদ্র সৈকত গুলো - বছরে এক দশমিক চার বিলিয়ন পর্যটক রা পর্যটন এ বের হয়ে যায় এই মহাদেশে । একেক টা পরিবার কম করে হলেও তিন থেকে ছয় পাউন্ড ব্যয় করে এই সময় টাতে। মনে হয় গোটা ইউরোপে বসেছে এক বিরাট মিনাবাজার । বাৎসরিক এই হলি ডে কালচার সম্পূর্ণ ইউরোপের জন্য একটি বিশাল লাভজনক ব্যবাসা এবং অদিবাসি দের জন্যও একটি খুবিই আনন্দ দায়ক সময় । বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে সম্পূর্ণ পরিবার এর সকলের জন্য এইটা একটি বিরাট অবসর সময় কাটানোর মিলনমেলা । ইস শুধু যদি এই রকম একটা কিছু করা যেতো আমাদের দেশে - বাচ্চাদের স্কুল ছুটির সময় ; তবে আমাদের মত বিশাল দেশে দেশের ভিতরে এত গুল ভ্রমণ কেন্দ্র নাই যা নাকি সবাই কে স্থান দিতে পারবে একত্রে । যদিও বর্তমানে দেশের মানুষ দেশের ভিতরে এবং বহির্বিশ্বেও ভ্রমণ বিলাসী হয়ে উঠছে ক্রমশ ।
এইসব অসংলগ্ন অনেক হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে কখন যে ইতালির অন্যতম ইউ নেস কো অনুমোদিত হেরিটেয ( ঐতিহ্য ) নগরী অ্যাঁকিলা তে এসে পরলাম তা বুঝতেই পারিনাই । বন্ধু বলল চলেন হুজুর আমারা পৌঁছে গেছি আমাদের পরবর্তী গন্তব্যে ; রোমান আমলের এক বিশাল সমুদ্র বন্দর এই শহর টি ছিল ; আজ যা আছে তার অর্ধেক ই পুরাকীর্তি এবং পুনঃখনন করতঃ আবিষ্কৃত নমুনা সমূহ ; এইডরিআটিক সমুদ্র থেকে নদী দিয়ে চ্যানেল এর মত করে এই বন্দরে মালামাল আমদানি ও রফতানি করত সেই আজ থেকে ২৩০০ - ২৪০০ বছর আগে । একটা চালু রোমান ক্যাথলিক গির্জা আছে এখানে এখনও - বিশাল একটা বেল টাওয়ার এখনোও প্রতি ঘণ্টার আগমনী শুনিয়ে দেয় বিশাল ঘণ্টার আওায়াজে । পাশেই একটা জাদুঘর চোখ জুড়ানো সব সমাহার সেই দুই - থেকে তিন হাজার বছর পুরানো সব প্রত্নতাত্তকিক সম্ভার দেখার মত, সেই ২ হাজার বছর পুরানা মোজাইক - ভাবতে আশ্চর্য লাগে ; সহস্র বছর পুরানো পুরাকীর্তির সমাহার দেখতে যেয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা পাড় করে দিলাম তা ভাবতেই পারি নাই ।
সেই ঐ আমলের হাড়ি বাসন, বিভিন্ন ধরনের মূর্তি, অস্ত্র সস্র, কারুকার্য খচিত আসবাব পত্র, বাক্স পেরটা, রাজবংসের নিদর্শন সমূহ ; চোখ ধাদানো সব সংগ্রহ । হেঁটে চলে গেলাম সেই নদীর পারে
এক দিনে তিন দেশ ভ্রমণ - পর্ব - ৪
কাভোলো পর্বত থেকে হেরিটেজ প্রাসাদ আকিলা হয়ে ট্রিয়েস্ট শহরে
সারারাত তাঁবুতে রাত কাটালাম ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে , রাত ১২ টার পর আস্তে আস্তে তাপমাত্রা নীচের দিকে নামতে থাকে । ব্যাটারি চালিত হিটার টা বেশ ভালই গরম বাতাস দিয়ে আমাদের দুজনকেই বেশ উষ্ণতা দিল । চতুর্দিকে শুধু ভ্যালির মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া বাতাসের তীব্র হাওয়ার শব্দ ছাড়া সব - কৌতুক আর বিভিন্ন মানুষের কথা বলা, এক্টিং করা থেকে একেকজন এর বিভিন্ন গল্প করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম মনেই নাই । হটাত ঘুব ভেঙ্গে গেল একটা দমকা হাওয়ার ঝাপটায় মনে হল যেন তাঁবু টাকে উঠিয়ে ফেলে আমাদের কে উড়িয়ে নিয়ে যাবে পাহাড়ের ঢালুর দিকে । ভীষণ খাঁড়া পাহাড় এর স্লোপ - কোথাও কোথাও প্রায় নব্বই ডিগ্রী খাঁড়া । ভাবতেই ভয় লাগে - আবার ভাবলাম পাহাড়ের ঐ প্রান্ত থেকে আবার বন্য কোন পশু না এসে আবার আক্রমণ করে । প্রতিরক্ষার জন্য কেবল আছে পাহাড়ে উঠার লাঠি দুটো আর রাতে বার বি কিউ করার জন্য খন্তা আর দুটো ৪ ইঞ্চি মাংস আর সবজি কাতার চাকু । আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে পরলাম - বালিশের নীচ থেকে টর্চ বের করে লাঠি নিয়ে বের হয়ে পরলাম তাঁবু থেকে । সেই অনেক বছর পর পাহাড়ে রাত কাটাচ্ছি - চাঁদের আলো আর আধারিতে পাহাড় দেখতে যে কি সুন্দর রাতের বেলা তা যে না দেখেছে তাকে বুঝানো বেশ কষ্টসাধ্য । আকাশে যদিও চাঁদ নাই - প্রায় অমাবস্যার মত কাল তারপর ও সব কেমন যেন পরিষ্কার - মাসুদ রানা বইয়ে পরেছিলাম অন্ধকারে প্রথমে এক চোখ খুলে আর এক চোখ বন্ধ করে রেখে কিছুক্ষণ পর বন্ধ চোখ খুলেই সব পরিষ্কার দেখতে লাগলাম । কিছুই পেলাম না দেখতে । আমার চলাচল শুনে ফ্রেডির ও ঘুম ভেঙ্গে গেল - ওর হাতের মাউনটেন ক্লাইমবিং ঘড়ি দেখে বলল যে , সকাল প্রায় সমাসন্ন ৪৫ মিনিট পরেই ঐ দিক থেকে সূর্য উঠবে । তাঁবু টা থাকুক চলেন সূর্য উদয় টা অবলোকন করে আসি । বললাম চল । প্রায় ৬০০ গজ উপড়ে পাহাড়টার ঐ ছোট্ট চুড়া থেকেই দেখা যাবে সূর্য উঠা দেখা যাবে । তড়িঘড়ি করে কাপড় পরেই বেরিয়ে পরলাম । উপড়ে উঠতে লেগে গেল ৩৫ মিনিট সে এক কঠিন সরু মেঠো পাহাড়ি ট্র্যাক আধো আলো আধো অন্ধকারাচ্ছন - বন্ধুর সেই পথ , অনেক কষ্টে উঠলাম - ওয়াও কি অপূর্ব সে দৃশ - মনে পরে গেল সেই ছোট বেলা আবার সাথে সিলেটের লাঠি টিলা ইপিআর বিওপি থেকে ও সকালে ইন্ডিয়ার ঐ পাস থেকে সূর্য টা পাহাড়ের গা’ ঘেঁষে উঠত লাল একতা অগ্নি গোলক এর মত ; হারিয়ে গেলাম সেই স্মৃতির অতল গর্ভে । কয়েক মাইল দূরে লেক বারচেয এর উপর দিয়ে একটা গ্যাস বেলুনের মত সূর্য টা আস্তে আস্তে ঊর্ধ্ব মুখি হয়ে উঠে আসছে যেন ; সে কি অপূর্ব - সবুজ লেকের পানিতে লাল সূর্যের আলোর বিকিরণ সবুজ এবং লালের সংমিশ্রণ প্রতিচ্ছবিত হচ্ছে প্রিসমের মত । ঢেউ এর সাথে সাথে দুলছে মৃদু ; পকেটে, রাক্সাক, জ্যাকেটের পকেটে হাত দিয়ে দেখি তাড়াহুড়ায় ফোন, ক্যামেরা, ভিডিও সব ই ফেলে এসেছি টেন্টে। ইস এতো সুন্দর একটা ক্ষণের ছবি গুল সেলুলয়েড এ ধরে রাখতে পারলাম না । এই সব করতে করতে সূর্য মামা চোখের নিমিষেই প্রজ্বলিত হয়ে উঠল পূর্ব দিগন্তে । কুয়াসায় ভিজে যাওয়া ঘাসের পাতার চূড়ামণিতে সূর্যের আলোর বিকিরণ জমে থাকা শিশিরের বলয়ে প্রতিবিম্ব হচ্ছে কাঁচের প্রিজমের মত । নেই কোন কোলাহল - প্রকৃতি তার আপন আঙ্গিনায় নিস্তব্ধ এবং আড়মোড়া ভেঙ্গে যেন রাতের বিছানার চাদর টা সরিয়ে জেগে উঠছে - নিত্তনৈমত্তিক কর্মকাণ্ড শুরু করার জন্য। আস্তে আস্তে অতি সন্তর্পণে এক পা দু পা করে নিচে নামতে লাগলাম - পায়ের বুট ছিল না - এডিডাস ট্রেইনার হটাত পিছলে গেল আর সঙ্গে সঙ্গে ফ্রেডী ধরবার আগেই নীচে নেমে গেলাম কয়েক ফুট , তাকিয়ে দেখি আমি ওর থেকে 20 - 3০ ফুট নীচে দুই তিনটা ওলট পালট খেয়ে একটা গর্তে শুয়ে আছি মাথার হ্যাট নাই, পাহাড়ে উঠার লাঠিও নেই, বাম হাত দিয়ে বেশ কনুই এর পাশে বেশ বড় একটা ক্ষত । বাম পায়ের গোড়ালি মনে হল মচকে গেছে । আমার নামতে সময় লেগেছে মনে হয় কয়েক সেকেন্ড আর ওখান থেকে উঠে দাঁড়াতে সময় লাগছে কয়েক মিনিট - ও নেমে আসলো বেশ কসরত করে - তাকিয়ে দেখলাম ও মা গো মা । এ যাত্রা জমের হাথ থেকে রক্ষা পেয়ে গেছি কপালের গুনে । তা না হলে এটা একটা বড় দুর্ঘটনা হয়ে যেত পারতো । সব ঘটে গেলো কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে । উঠে দাঁড়াতে বেশ কষ্ট পেতে লাগলাম । চারিদিকে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলাম লাঠি আর হ্যাট টা । চোখ বুজে কয়েক মুহূর্ত নিজেকে বললাম ব্রেনে মেসেজ পাঠানোর জন্য - ইমরান তোমার কোন ব্যথা নাই কোন ব্যথা নাই - কোন ব্যথা নাই । এক মিনিটে ৫৫ বার বললাম এবং তার পর হাঁটতে লাগলাম । ব্যথা কম অনুভূত হতে লাগল যেন । ইতিমধ্যে ও এসে হাজির ততক্ষণে আমার পাশে । একটু একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তাঁবুর বেইজ ক্যাম্পে নেমে আসলাম ; ট্রেইনার টা খুলে একটু রেস্ট নিলাম- ইতিমধ্যে ও তাঁবু গুটিয়ে ফেলল সব কিছু র্যাকস্যাক ঢুকিয়ে ফেললো । ওর ব্যাগ থেকে একটা স্প্রে বের করে গোড়ালি তে স্প্রে করে দিলো । অল্পক্ষণের মধ্যেই ব্যাথা বেমালুম আলেমুল গায়েব হয়ে গেলো । স্কন্ধে ৮০ পাউণ্ড ওজন নিয়ে পাহাড় বেয়ে নীচে নেমে আস্তে লাগলাম - আধা পথে এসে রোপ ক্যারেজ ওয়ে দিয়ে নেমে আসলাম । গাড়িতে সব কিছু রেখে একটা গরুর খামারের গরুর দুধের বানানো পনির এবং দুধের ক্রিম চা ও গরুর মাংসের সাথে বানানো পনির স্কিলেট দিয়ে প্রাতরাশ সেরে গাড়িতে চেপে বসলাম ততক্ষণে পায়ের ব্যাথা কম ও হাতের রক্ত পরা বন্ধ হয়ে গেছে ।
ওর পোরসে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম দ্রুত গতিতে সকাল সর্বসাকুল্যে কেবল ৭ - ৪৫, রাস্তায় লেক বারচেয এ থামলাম - কোভোলো পাহাড়ের এবং সংলগ্ন সকল পাহাড়ের নিঃসৃত জলরাশি জমে জমেই সৃষ্টি করেছে এই বিশাল লেকের । ওটার পাস দিয়েই আগের আমলের পাহাড় খুঁড়ে সুড়ঙ্গএর ভিতর দিয়ে ওল্ড রোড দেখলাম ; কি বিশাল কাজ- কি ওদের প্রকৌশলীদের মেধা - আর শ্রমিক দের সাহস , হাতুড়ী, কোদাল, বেলচা, সাবল দিয়ে খুদে খুদে বানিয়েছে প্রায় ৫ মাইল দীর্ঘ সুড়ঙ্গ রাস্তা - এক পাশে পাহাড়ের ছাদ আর দেওয়াল আর অন্য পাশে ৩ হাজার ফুট বিশাল পাহাড়ের খাদ - বিশাল সেই খাদ - তাকালেই গা শিউরে উঠে । ঐ ভ্যালী বা কানিওন এর মাঝেই জন্ম নিয়েছে ইতালির অন্যতম প্রধান নদী - যা পারদোনোনা হয়ে কিছু জায়গা শুকিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও প্রবাহিত হয়েছে এড্রিয়াটিক সাগরে । লেকের পাড়েই মাছ এর পোনা ঘুর ঘুর করছে ঝাঁকে ঝাঁকে ; কেউ কণিজাল বা বড়শি দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে না ঐ সব বালি মাছ জাতিয় মাছ গুলোকে। পাহাড়ের বিশাল গহ্বর এর উপর দিয়ে দুটো পাহাড় কে জোড়া লাগিয়েছে একটা দড়ির ঝুলন্ত ব্রিজ দিয়ে - সেই ২ হাজার ফুট উপড়ে এবং এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ের মধ্যে তফাত ২৫০ - ৩০০ ফুট । ঐ ঝুলন্ত ব্রিজ টা পাড় হলাম একা একা হেঁটে হেঁটে কোমরে সেফটি বেল্ট বেধে আর বেল্টের শেষে ক্লিপ গুল দড়িতে লাগিয়ে দেওয়ার জন্য যাতে পা পিছলে পরে গেলোও যাতে একদম দুই হাজার ফুট নীচে যাতে না পরে যায় কেই । হাজার হাজার পর্যটক চতুর্দিকে ; কেউ এসেছে গাড়ী নিয়ে, কেউ কেউ এসেছে হেঁটে হেঁটে তারা হেঁটে হেঁটেই ভ্রমণ করবে ছয় সাত সপ্তাহ ইতালিতে এসেছে ফিনল্যান্ড থেকে, নিউজিল্যান্ড থেকে, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রাঞ্চ বা রাশিয়া থেকে, কেউ বা এই খানেই তাঁবু তে কিংবা মোটর হোম এই থাকবে কয়েক সপ্তাহ আবার অন্যরা এসেছে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কোচ ভড়ে ভড়ে। গরমের যত বৃদ্ধি পাচ্ছে পরিধেয় কাপড় ও তত সংকীর্ণ হচ্ছে । কেউ কারোর দিকে তাকাবার সময় নাই । ঘাসের মধ্যেই প্রেমিক প্রেমিকারা বিকিনি এবং হ্যাফ পেন্ট পরে কড়া রোডে শরীরের চামড়া ঝলসানোর জন্য শুয়ে আছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা । সাইকেলের পিছনে বেয়ারিং এর গাড়ীর মত ট্রেয়াইলার এ বসিয়ে মা বা বাবা দিব্বি সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে । লোকে লোকারণ্য । অগাস্ট মাসে ইউরোপ জুড়ে চলে বাৎসরিক ছুটির মাস ঐ মাসে বাচ্চাদের স্কুল , কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব ৬ থেকে ১২ সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকে । হোটেল, মোটেল, বেড এন্ড ব্রেকফাস্ট , হোস্টেল কোথাও কোন জায়গা পাওয়া সম্ভব নয় । সারা দিন ঘুরে বেড়ায় সব পর্যটক রা আর রাতের বেলা সবাই ভালো দামি কাপড় চোপড় পরে শহরে বেরিয়ে পরে সবাই রেস্টুরেন্ট এ খাবার খেতে, বার বা পাব এ যাবে মদ্য পান ও অন্যান্য দের সাথে সামাজিক আড্ডা মারা এবং গান শুনবে, ডার্ট খেলবে বা কারাওকি তে গান গাবে আর বিয়ার, ওয়াইন, বা স্পিরিট পান করবে - আর যুবক যুবতি রা দল বেধে বেধে শহরের ডিস্কো তে নেচে গেয়ে মদ্য পান করে সেই গভীর রাতে যার যার ঘুমাবার স্থানে ফিরে যাবে আবার সকালে শুরু করে দিবে তাদের ভ্রমণ কার্যক্রম । এক অদ্ভুত সংস্কৃতি আমাদের কাছে হয়ত মনে হয় বা হবে । এই অগাস্ট মাসের জন্য চাতক পাখির মত অধীর আগ্রহে বসে থাকে ইউরোপের সব ভ্রমণ করার মত প্রসিদ্ধ বা নৈসর্গিক স্থান গুলো এবং সমুদ্র সৈকত গুলো - বছরে এক দশমিক চার বিলিয়ন পর্যটক রা পর্যটন এ বের হয়ে যায় এই মহাদেশে । একেক টা পরিবার কম করে হলেও তিন থেকে ছয় পাউন্ড ব্যয় করে এই সময় টাতে। মনে হয় গোটা ইউরোপে বসেছে এক বিরাট মিনাবাজার । বাৎসরিক এই হলি ডে কালচার সম্পূর্ণ ইউরোপের জন্য একটি বিশাল লাভজনক ব্যবাসা এবং অদিবাসি দের জন্যও একটি খুবিই আনন্দ দায়ক সময় । বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে সম্পূর্ণ পরিবার এর সকলের জন্য এইটা একটি বিরাট অবসর সময় কাটানোর মিলনমেলা । ইস শুধু যদি এই রকম একটা কিছু করা যেতো আমাদের দেশে - বাচ্চাদের স্কুল ছুটির সময় ; তবে আমাদের মত বিশাল দেশে দেশের ভিতরে এত গুল ভ্রমণ কেন্দ্র নাই যা নাকি সবাই কে স্থান দিতে পারবে একত্রে । যদিও বর্তমানে দেশের মানুষ দেশের ভিতরে এবং বহির্বিশ্বেও ভ্রমণ বিলাসী হয়ে উঠছে ক্রমশ ।
এইসব অসংলগ্ন অনেক হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে কখন যে ইতালির অন্যতম ইউ নেস কো অনুমোদিত হেরিটেয ( ঐতিহ্য ) নগরী অ্যাঁকিলা তে এসে পরলাম তা বুঝতেই পারিনাই । বন্ধু বলল চলেন হুজুর আমারা পৌঁছে গেছি আমাদের পরবর্তী গন্তব্যে ; রোমান আমলের এক বিশাল সমুদ্র বন্দর এই শহর টি ছিল ; আজ যা আছে তার অর্ধেক ই পুরাকীর্তি এবং পুনঃখনন করতঃ আবিষ্কৃত নমুনা সমূহ ; এইডরিআটিক সমুদ্র থেকে নদী দিয়ে চ্যানেল এর মত করে এই বন্দরে মালামাল আমদানি ও রফতানি করত সেই আজ থেকে ২৩০০ - ২৪০০ বছর আগে । একটা চালু রোমান ক্যাথলিক গির্জা আছে এখানে এখনও - বিশাল একটা বেল টাওয়ার এখনোও প্রতি ঘণ্টার আগমনী শুনিয়ে দেয় বিশাল ঘণ্টার আওায়াজে । পাশেই একটা জাদুঘর চোখ জুড়ানো সব সমাহার সেই দুই - থেকে তিন হাজার বছর পুরানো সব প্রত্নতাত্তকিক সম্ভার দেখার মত, সেই ২ হাজার বছর পুরানা মোজাইক - ভাবতে আশ্চর্য লাগে ; সহস্র বছর পুরানো পুরাকীর্তির সমাহার দেখতে যেয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা পাড় করে দিলাম তা ভাবতেই পারি নাই ।
সেই ঐ আমলের হাড়ি বাসন, বিভিন্ন ধরনের মূর্তি, অস্ত্র সস্র, কারুকার্য খচিত আসবাব পত্র, বাক্স পেরটা, রাজবংসের নিদর্শন সমূহ ; চোখ ধাদানো সব সংগ্রহ । হেঁটে চলে গেলাম সেই নদীর পারে
Comments
Post a Comment