Imran Ahmed Chowdhury - Reviews a book

'বাংলার ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধে... - 

Imran Ahmed Chowdhury



Imran A. Chowdhury
Imran A. Chowdhury 






''বাংলার ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধে ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও প্রবাসীদের অবদান ‘'
'বই পুনঃমূল্যায়ন'


ল্যেফটেনান্ট ইমরান আহমেদ চৌধুরী (অব) 



Imran A. Chowdhury of UK
Imran A. Chowdhury 





''বাংলার ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধে ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও প্রবাসীদের অবদান ‘' এই বইটি হাতে পেয়েই প্রথমে একেবারে গোগ্রাসে পড়ে ফেললাম । লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আব্দুল হাদি তাঁর লেখনীতে এমন সব স্মৃতির অবতারণা করেছেন যে গুলো প্রকাশ্যে দিবালোকের মত আমার মনের পর্দায় বার বার উদ্ভাসিত হচ্ছিল পড়ার সময় , সেই উত্তাল দিনের ঘটনা গুলো আর অশ্রুসিক্ত নেত্রে রোমন্থন করিছিলাম বার বার । 
উঁনার এই বইতে লিখিত ঘটনাপ্রবাহের আমিও এক নীরব - অতি ক্ষুদ্র সাক্ষী - আমি ও পদচারনা করেছিলাম একদা এই জনপদে নীরবে, নিভৃতে সেই সংগ্রামী দামামার বিস্ফোরণের মুহূর্তে । আমি ছিলাম ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সেই অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দাবাননেল ক্ষণে একজন ১০ বছর বয়সী বালক হিসেবে । স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি - মার্চ মাসের ঘটনাবলী এবং প্রতিরোধ যুদ্ধ পর্ব সম্পর্কে লেখক যা বর্ণনা দিয়েছেন সেই সব সবের সাথে আমার সম্পৃক্ততা সন্নিবেশিত। তাই আমি অকপটে একাগ্রচিত্তে বলতে পারি যে, এই সব ঘটনা ১০০ % সত্যি এবং আমি ও এই সত্যের এক সতীর্থ । 
স্বাধীনতা যুদ্ধ আমার জীবনের অন্যতম প্রধান অধ্যায়, যে অধ্যায় প্রবাহিত করেছে আমার জীবন কে এক ভিন্ন ধারায় । এক অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ( ফজলুল হক চৌধুরী- এই বইয়ের ১০৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত ) এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলে বন্দী এবং নিহত এক ১৭ বছর বয়সী শহীদ মুক্তিযোদ্ধার অনুজ ( এই বইয়ের ১৩৩- ১৩৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত ) এবং নিজে একজন ১১ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা বলতে চাই যে, ( যদিও দুইটি বর্ণিত বর্ণনাই কাকতালীয় - এই বই পড়তে যেয়েই পেলাম দুজনার নাম ) জনাব আব্দুল হাদি লিখিত এই বইটি একটি সম্পূর্ণ পুস্তক যাতে সন্নিবেশিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল এবং সামগ্রিক ভগ্নাংশ গুলো । আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের লেখনী গুলোতে এই রকম আভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক বিষয়ের সামগ্রিক চিত্র খুব কম বইতেই অংকিত হয়েছে । অনেক সাধনা, অধ্যাবসায়, বিশ্লেষণ, অনুসন্ধান এবং গবেষণা করেই উঁনি এই বই টি লেখেছেন তা’ বই টার প্রত্যেক টি পৃষ্ঠাতেই প্রতীয়মান। 
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার অবদান যে কি তা’ খুব একটা মূল্যায়ন হয় নাই আমার দৃষ্টিতে। অনেক বিশাল নেতা এবং তাদের নেতৃত্ব এর বিজয়গাঁথা হারিয়ে গেছে কালের অতল গর্ভে , অনেকে আবার নিক্ষিপ্ত হয়েছেন ইতিহাসের আস্তাকুরে ।কিন্তু ১৯৭১ সালের সেই আগ্নেয়গিরির লাভা পূর্ণ জনপদের দিন গুলোতে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো একই ছাতার নীচে দলমত, আদর্শ বিসর্জন দিয়ে । ইতিমধ্যে অনেক জল গড়িয়ে গেছে তিতাস নদী দিয়ে । আজ সময় এসেছে ঐ সব বিশাল হস্তিতুল্য নেতাদের কে শ্রদ্ধা জানাবার এবং আমি খুবি অনুপ্রাণিত যে, জনাব হাদি তাঁর বইতে ঐসব হারিয়ে যাওয়া নাম গুলোকে লিপিবদ্ধ করেছেন। যার জন্য আমি লেখক কে আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে জানাই শুভেচ্ছা ।
আমি অত্যন্ত গর্বিত যে আমার রেজিমেন্ট ‘' ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ‘' ( আমি এই রেজিমেন্টে কমিশন প্রাপ্ত একজন অফিসার ) এর ৪ ইস্ট বেঙ্গল ব্রাক্ষণবাড়িয়া বিপ্লবের কর্ণধার ছিল , ঐ রেজিমেন্টের সকল অফিসার, জেসিও এবং সৈনিক দের প্রতি ব্রাক্ষণবাড়িয়াবাসি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে । তারা ছিল আমাদের সাহস এবং আমাদের ঐ দুর্দিনের একমাত্র ভরসা ।
ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা যুদ্ধে যে অবদান রেখেছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে আজীবন স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে এবং হাদি সাহেবের এই বই অনন্তকাল অবধি একটা রেফারেন্স হিসাবে সকল প্রকার ইতিহাসবিদ, ইতিহাস গবেষক, একাডেমিক উচ্চশিক্ষার জন্য একটি অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ হিসাবে সমাদৃত হবে । 
এখানে আমি মনে করি এটা উল্লেখ করা অত্যন্ত প্রয়োজন যে, ব্রাক্ষণবাড়িয়া ঢাকা ও কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থান করেও ব্রাক্ষণবাড়িয়া ১৭ই এপ্রিল ১৯৭১ পর্যন্ত মুক্ত এলাকা ছিল; বাংলাদেশের অঘোষিত রাজধানীর মত। অনেকেরই হয়ত জানা নেই যে, এই সেই ব্রাক্ষণবাড়িয়া যেখানেই প্রথম শুরু হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ এবং মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ অভিযান । এই শুরুর পথ বেয়েই আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ কে প্রণয়ন করা হয় এক গেরিলা জনযুদ্ধে । এই প্রক্রিয়ায় ব্রাক্ষণবাড়িয়া এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়া - কসবা - আগরতলা করিডোর এর ভৌগলিক অবস্থান যে কি অবদান রেখেছে তা এই অল্প পরিসরে লেখা সম্ভব নয় । 
পরিশেষে, আমি আশা করব এই বইটির যেন প্রচুর প্রচার বৃদ্ধি হয় এবং সবাই কে সবিনয় অনুরোধ যাতে তারা এই বইটি তাদের সংগ্রহে রাখে ও সংরক্ষণ করে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম এক অবিচ্ছেদ দলিল হিসেবে। 
ধন্যবাদান্তে,
লেঃ ইমরান আহমেদ চৌধুরী (অব) 
ইংল্যান্ড

Comments