Mercenary - A professional soldier hired to serve in a foreign army.)

লেপ্যটিস মাগনা - খ্যাত দেশে মার্সেনাড়ী 
(Mercenary - A  professional soldier hired to serve in a foreign army.)

জীবন একটা বড়ই বিচিত্র এক টা বিশাল খালি ক্যানভাস - জীবনের যাত্রার এই পথে পথে বিভিন্ন সাক্ষর গুলো আস্তে আস্তে ক্যানভাস টাকে পরিপূর্ণ করতে থাকে শিল্পীর রঙে ভেজানো তুলির কখনো শক্ত আবার কখনো মোলায়েম স্পর্শে

জীবন মনে হয় এক ধরনের পরিপূর্ণটা পায় বিচিত্র তাতে এক ঘেয়েমি নিছক জীবিকা নির্বাহের জন্য জীবন যাপন  করায় নাই কোন রকম অ্যাডভ্যানচার আজানা অচেনা জায়গা, শহর, দেশ, মহাদেশ এই সব এর প্রতি আকর্ষণ সবার থাকে না টা টা কাজ - রাতে টায় ঘুমিয়ে পড়া - সকালে তাহাজ্জুদের নামাজের আগে উঠে তামাইম্মুম করে নামাজ পড়ে ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত তসবিহ জপা সবার দ্বারা সম্ভব নয়

দুপুরে করা রৌদ্র সেদিন মাস টা এপ্রিল কালো পিচের টারমার্কে চিক চিক করছে রোদ - চেক ইন করে বলাকা লাউঞ্জে বসে বসে অপেক্ষায় প্লেনে উঠার জন্য ব্রিটিশ এয়ার ওয়েজ এর ঢাকা - বম্বে ফ্লাইট   টা ৫৫ তে টেক অফ করবে প্যাসেঞ্জার এক দম কম একা একা বসে থাকা আর কফির ক্যাপে হাল্কা কয়েক টা চুমুক দিয়েই বিতৃষ্ণা লাগল উঠে যেয়ে রান ওয়ের দিকের ক্যানটিলিভার বারান্ধায় দাঁড়িয়ে  একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগল মহা সুখে


মাস খানেক আগে অবসারভার পত্রিকায় এক কলাম - ইঞ্চি একটা বিজ্ঞাপন ‘' দোভাষী প্রয়োজন ( ইন্টারপ্রেটআর আবশ্যক ) ‘' বিদেশী নাগরিকের জন্য এক জন দক্ষ বাংলা এবং ইংরেজি  ভাষায় কথোপকথন - লিখিত অনুবাদ করতে জানে  এমন একজন দরকার ; গাড়ী চালাতে জানা আবশ্যক পার্ট টাইম আপাততঃ বেতন আলোচনা সাপেক্ষে ; যোগাযোগ করুন অতি সত্তর  টেলিফোন ৬০০০৬০ জাতিও একটা নাম্বারে   প্রবাস অফিস থেকে বিকালে ফোন গুড়ানো - পরদিন বিকালে সাক্ষাত এবং চাকরি ফুল টাইম পাক্কা হয়ে গেল কিন্তু বলা যাবে না কাউকে  

বিশাল অফিস গুলশান এভেনুর শেষ মাথায় প্রায়তিন তলায় - একটা দূতাবাস ; স্বপ্ন বিলাসী মাসিক বেতন তা আবার বিদেশী মুদ্রায় পোয়াবার আর কাকে বলে চাকরী না পাড়ে ভাল ইংরাজি আর বাংলা তো প্রশ্নই উঠে না ; কিন্তু বাংলাদেশের সব কিছু জানে বাঙ্গালদেশিদের চেয়েও অধিকতর  

প্রথম সাক্ষাতেই কুপোকাত - আমাকে বেশ পছন্দ করে ফেলল - বলল আগামী মাসের তারিখ থেকে যোগদান করার জন্য আর কয়েক টা আনুশাংগিক  কাগজ পত্র এবং পাসপোর্ট চাইলো - ভাগ্য ভালো তাড় কয়দিন আগেই ছাত্র থাকাকালীন সময়ের পাসপোর্টটা রিনুই করেয়েছিলাম লন্ডন চলে যাবার জন্য -




দোভাষী এই চাকরীটা পাবার আগে একদিন বন্ধুর অফিসে বসে বসে ভাবছিলাম - কি কি প্রফেশনে আমি অ্যাডজাস্ট করবো ভালো  

হটাত  ফোন ঘুরালাম আদমজী কোর্টের আমেরিকান এম্বাসসিতে - ছাইলাম মিলিটারি উপদেষ্টা কে লে কর্নেল ডবলু গ্লাস ইউ এস মেরিন কোরের ওরে বাবা কি যে প্রতিরক্ষা বুজ্ঝ পাড় হতে হলও তাড় সাথে দেখা করতে - নিজ হাঁতে কফি বানিয়ে পরিবেশন করলো - মনে মনে ভাবলাম বাংলাদেশের লে কর্নেল আর ওদের লে কর্নেল - ! মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন বৈ আর কিচ্ছু বললে বেলাস্ফেমি জাতীয় অপরাধ হয়ে যেতে পাড়ে

বললেন কি চাই - উত্তরে বললাম আমার একটা চাকরী দরকার - এক্সেস কন্ট্রোল তখন ওরা ম্যানেজার হিশেবে ইন্টার্ভিউ নিচ্ছিল - হেড অফ চাঞ্ছেরির সাথে কথা বলে সঙ্গে সঙ্গে সব বেবস্থা হয়ে গেল ইন্টার্ভিউ এর খুবই ডাউন টু আর্থ জাতীয় একজন কর্নেল গ্লাস আমাকে বেশ পছন্দও করে ফেললেন প্রথম দেখাতেইঈশ  তখন  যদি  ঢাকায় মোবাইল ফোন থাকত


তিন দিন পড় একটা চিঠি পেলাম - আমাকে দেখা করতে অনুরধ করা হয়েছে ; হেড অফ চেঞ্ছারির কথা শুনে আমার চোখ চরক গাছে - উনি বললেন  ‘' মিস্টার ছধরি উই আর ওভার কয়ালিফায়েড ফর দ্যা পোস্ট ‘' ইয়োর নলেজ ফর দিস পোস্ট ঈশ ফার টু হাঁই ‘' গোবেচারার মত ফ্যালফ্যাল করে ওর দিকে তাকিয়ে একটা শুষ্ক হাস্য উপহার দিলাম ; আমার কাষ্ঠ হাসি দেখে সে অবাক হয়ে বলল - কিন্তু আমাদের কাছে অন্য আরেক টা পোস্ট আছে হুইসচ কুড বে মোর আপ্প্রপ্রিয়েট ফর ইয়উ


মগবাজারের অফিসে সেন্ট্রাল স্টোরের এর কন্ট্রোলার - হাহাহা আবার কোয়ার্টার মাস্টারি বললাম আমি একটু চিন্তা করে নেই পড়ে জানাব স্টোর - বদ্ধ ঘর, অন্ধকার, সোঁদা গন্ধ , আইলের মধ্যে হাঁটাচলা করা এইসব জায়গায় আমি কেমন জানি কলস্তফভিয়া তে ভুগি শ্বাস প্রশ্বাস কেমন জানি জড়তা জড়তা অনুভব করতাম আর্মিতেই - ট্রেঞ্চে, টানেলে , তাবুতে, বাঙ্কারে আমার খুব অশস্থি লাগত তখনি আগে যদি জানাতাম টা হলে মেডিক্যাল বোর্ড গিয়ে সব বেবস্থা করতে পারতাম = কিন্তু ফাঁক ফোকর সব সময়ই কম বুঝতাম

মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম - ইতিহাসে এম পরীক্ষা পাশ করবো - তার পড় এই বি থেকে এম বি টা করবো টা না হলে সিলেট যেয়ে দোস্ত আমার এহসান কে বলব - লন্ডন যাবো আবার সবে ডক্টরেট

শেষ মেশ কর্নেল কে বললাম - স্টোরে আমার পোষাবে না ; রাতে ওর গুলশান ৬১ নম্বর রোডের বাসায় ড্রিঙ্ক এর জন্য আস্তে বলল বেশ জমে গেল ওনার সাথে এক ধরনের বন্ধুত্ব জানিনা এখন সে কোথায়  

তখনি বুঝলাম যে, আমার একটা ভালো গুন আছে বিদেশীদের সাথে সখ্যতা গুড়ে তোলার মত  

তাই, অবসারভাএর বিজ্ঞাপনটা দেখেই ফোন ঘুরালাম - ২৫ অথবা ৪০ নাম্বার থেকে আমলে গুলশান বনানীতে রিং করে লাইন পাওয়ার আগে হেঁটেই অনেক সময় সহসা পৌছা যেত তখনকার ঢাকা শহরে

তিন ধাপে মিটিং এর পড় চতুর্থ বারের বার গেলাম ওর অফিসে - প্রথম সাক্ষাত হলও ভিডিও কানেকশন ওখান থেকে গেলাম রোজ গার্ডেন রেস্ত হাউসে  ওখানের পড় দেখা করলাম লা ব্যালে নামক এক হেয়ার ড্রেসিং সেলুনের ওয়েটিং রুমএ ওখান থেকে অফিসে

সব সময় ফায়সালা জারি ছিল ফারাকের একটু একটু মুচকি হাসলাম যে, এক সময়কার শিকারি আজ শিকারে পরিণত হয়েছে  

গরমে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এইসব অসংলগ্ন সব কিছু ভাবতে ভাবতে কখন যে হাতের সিগারেট জ্বলতে জ্বলতে আঙ্গুলের কাছে এসে গেছে তা ঘুণাক্ষরেও মনে নেই

এস্ত্রে তে সিগারেট নিভিয়ে ভাবতে লাগলাম আবার - হাঁটতে হাঁটতে শিতাতাপ নিয়ন্ত্রিত বারে ঢুকলাম - কয়েক টা টেবিলে ছয় সাত টা কাঁপল এবং আরও পাঁচ ছয় জন প্যাসেঞ্জার ছুটিয়ে গরমের তাণ্ডবটাকে নিরাময় করতে ঠাণ্ডা হানিকেন বিয়ার পান করছে ; সবার হ্যাটেই বিয়ার আর গপ্লে মশগুল - একদম শেষ টেবিলে বসে বসে  আধো আলো আধো আঁধারে ইন্টারন্যাশনাল হেরালড ত্রিবুইন পড়ছে আমার যাত্রা সঙ্গী নামটা না হয় না বললাম  আজ  

আমাকে দেখে উঠে বসতে বলল ওর টেবিলে - বেশ একটা কঠিন হ্যান্ডসেক  করল হ্যালো, ইউ ওকে প্লিজ সিট দাউন

বললাম চেক ইন করা শেষ নাকি - বলল মালিশ - অর্থ টা আসলেই কি এখনো বুঝি না   ওকে দেখেছি কয়েক বার মনে হয় বাবু জাতীয় কিছু একটা করে ( বাবু - ক্লার্ক ) বসে অল্প কিছু কথা বলতে বলতেই টেনয় ঘোষণা আলো প্লেনে উঠার  


 বোর্ডিং কার্ডে আমি এক আইলে ওর আইল অনেক পিছনে - ভদ্র লোক সে এক জন - নম্র এবং খুব কেন জানি সমীহ করে আমাকে - আমার চাকরী ডাটা চারদিন আগে বিদেশ - সিঙ্গাপুরে গিয়েছিল ওখান থেকে হঠাৎ মেসেজ আসল আমাকে নিয়ে বম্বে যেতে - এক দিনের ভিতর পাসপোর্ট এবং ভিক্টরি ট্র্যাভেল আমিন কোর্ট থেকে সঙ্গে সঙ্গে টিকেট এসে গেল একটা ছোট লাগেজ আমার তিন দিনের জন্য যাচ্ছি মাত্র  

প্লেন ছাড়ল মাথায় বন বন করে চিন্তা গুলো উকি ঝুঁকি মারছে - হটাৎ কেন আমাকে ডাকা হলও    মাত্র মাস ১২ - ১৩ দিন আমার চাকরীর বয়েস - রেফেরেঞ্চ যাদের নাম দিয়েছিলাম তাঁদের কে জিজ্ঞেস করে নাই - এখনো - অথচ বিদেশে ভ্রমণে যাওয়ার জন্য তলব ? কোন কিছুই দুই দুইয়ে মিলাতে পারছিনা অসংলগ্ন - ইতিমধ্যে মগবাজারেরও ফোন করে লাইন পেলাম না দুই দিন যাবত পড়ে একটা ছোট্ট চিরকুট পাঠিয়ে দিয়েছিলাম আবুল কে দিয়ে ; বগুড়ার আমল থেকেই সঙ্গে সঙ্গে আছে আবুল - বেশ বিশ্বাসযোগ্য  

তিন ঘণ্টার ফ্লাইট - ছয় টা সাড়ে ছয়টা বেজে যাবে বম্বে তে পৌঁছেতে এই ফাঁকে একটু ঘুমিয়ে নেই না কেন - যা বলা তাই কাজ - ল্যান্ডিং এর আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গল শান্তাক্রুয - মাসুদ রানা বৈতে পরেছি অনেক বার - এই প্রথম বম্বে তে - আমার এক ধরনের স্বপ্নের শহর   এম্বাসেডর ট্যাক্সি তে আমারা দুইজন সন্ধ্যার ট্রাফিক গিজ গিজ করছে বম্বে  

জুহু তাঁরা রোডে রয়েল গার্ডেন সে থামল ট্যাক্সি সুটকেস নিয়ে প্রবেশ করলাম - কারও পিছনে হাঁটতে আমার কখনোই ভালো লাগে না - তবুও হাঁটলাম ১০ কদম এর মত কন্সিয়ারজে প্রবেশ করে রুমের চাবি নিলো দুই জনার জন্য লিফটে উঠে পাশাপাশি দুই রুমে আমরা দুজন বলল বস এই হোটেলেই এই ফ্লোরে আরেকটা রুমে আছেন - ডিনারে দেখা হবে রাত্র :৪৫   লবিতে

একটা ফার্স্ট ক্লাস শাওয়ার করে ফ্রেশ হয়ে দুরে তাকিয়ে অবলোকন করতে লাগলাম আরব সাগর কেরাতের বম্বে অপূর্ব গ্লিতযি - নিওন বাতির বিল বোর্ড - অপূর্ব সুন্দরি মহিলাদের মডেলিং শাদা ধপধপে দাঁতের সর্ব দন্ত বিকশিত হাঁসি - দারুণ প্রাঞ্জল , সাগরে মনে হলো উচ্ছোষিত আলো বিকিরণ করছে বেশ বেশ বড় বড় প্রমোদ তরি (ইওত )  

মস্তিষ্ক এখনো বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে কি কারণে আমি  এখানে - এক অজানা সাসপেন্স -( ভয় বলব না ) , থ্রিল, একটা মেলো ড্রমা টিক শিহরন অনুভূত হচ্ছে ভিতরে ভিতরে - ভাবলাম ওরা তো যা তা  লোক নয় - কূটনৈতিক - এদের কাছ থেকে কোন প্রকার ধাপ্পাবাজি আসা করা যায় না

এইসব ভাবতে ভাবতেই টেলিফোন বেজে উঠল - উঠে যেয়ে ধরলাম - হ্যালো বলার সঙ্গে সঙ্গে ওপাশে শুনতে পেলাম সেই পরিচিত গলা - বলল প্লিজ কাম ইফ উই আর রেডি - লবি বার

বললাম ফাইভ মিনিট - এই আম কামিং ডাউঁন ……………………

ভাগ্য ভালো তাড় কইদিন আগে ঢাকা কলেজের সামনে থেকে একটা স্যুট বানিয়েছিলাম - তা না হলে তো একে বারে পউপার  লাগত আজ আমাকে

দাঁড়িয়ে আইনাতে দেখলাম স্টিল লুকিং দ্যা সেম যা দেখে অনেকেই ঈর্ষান্বিত হতো - কেই কেই আবার বলত আমি নাকি অনেক টা হলিউডের নায়ক ‘' গ্রেগরি পেগের মত দেখতে ‘' 

একটা ভিসাছ বঙ্কিম হাঁসি হেসে  হেসে ততক্ষণে লিফট থেকে বের হয়ে এলাম ……




লিফট থেকে বের হয়ে লবিতে দাঁড়িয়ে চতুর্দিকে তাকিয়ে নিলাম একটু ভালো করে - ডান দিকে মেইন গেঁটের বা পাশেই দেখতে পেলাম রয়েল বার

ধীর পায়ে প্রবেশ করলাম - বেশ আলো আঁধারের খেলা বারে - সেই শেষ মাথায় স্টেজে চলছে লাইভ মিউজিক ঘড়িতে সময় ; ৪৫; ১৭ /১৮ সেকেন্ড কোথাও দেখতে পেলাম না ওনাকে আমার চাকরি দাতা কে

বারের একদম কাছে যেয়ে বারে দাঁড়িয়ে বারে হেলান দিয়ে খুঁজতে লাগলাম ওনাদের কে ; বার টেন্ডার কে বললাম এক গ্লাস অরেঞ্জ জুস ওয়িত আইস দেবার জন্য - হটাত দেখি আমার দিকে তাকিয়ে হাঁত দিয়ে ইশারা করলো এক জন কাছে যেয়ে চিনতে পারলাম ছয় ফুট ইঞ্চি লম্বা একটু বয়স্ক এক ভদ্র লোক আর মস্তাফা আবদাল মাসাবি ( আমার বস- আমার চাকরী ডাতা ) বসে আছে হাঁতে ওয়াইন গ্লাসে মনে হোল রেড ওয়াইন আমার পিছু পিছু ওয়েটআর নিয়ে আসলো আমার ড্রিঙ্ক

 খুব ভালো ইংরেজি বলেন এই ভদ্রলোক ; ক্লিয়ার স্পষ্ট উচ্চারণ - আমি নিজে ওনার শব্দএর মানে বুঝতে পারছিলাম না   অনেক ধরনের প্রশ্ন করলো এবং আমার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চাইলো খুবই অমায়িক মানুষ টি কথা বলার সময় একটা বিরাট হাসি ওর মুখ টাকে উজ্জ্বল করে ফেলছিল ; মস্তাফা চুপ করে আস্তে আস্তে ওর গ্লাসে মৃদু সিপ দ্বিত্বেই থাকলো   বেশ কাছে টেনে নিলো উনি ওনার বন্ধুত্ব সুলভ আপ্যায়নে তখনো ভিতরে ভিতরে ছট ফট ছট ফট করছি - কেন আমাকে এখানে ডেকে আনা হল - কি এমন সিরিয়াস ব্যাপার যেটা ঢাকায় বলে গেল বা যেত না আমার সঙ্গে যে এসেছিল তাড় টিকিটিও দেখলাম না কোথাও  
পরিচয় পর্বে বুঝলাম নতুন অতিথি ওদের দেশের আর্মির মিলিটারি একাডেমী জাতীয় একটা অরগানাইজেসন এর প্রধান প্রিন্সিপাল

বিভিন্ন দেশ থেকে ওরা প্রাক্তন অফিসার দেড় কে ওদের দেশে নিয়োগ করছে - ওদের দেশের অফিসার এবং সৈনিকদের কে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য রাশভারী ভদ্র লোক বেশ উঁচু রাঙ্কের অফিসার মনে হোল - ওরা একজন আরেক জনের সাথে অভদ্রের মত আমার সামনে অনর্গল ওদের ভাষায় কথা বলতেই থাকলো - ব্যাপার টা  আমার কাছে অতি শ্রুতি এবং দৃষ্টি কটুর মনে হচ্ছিল   যা বুঝলাম ভারতে ওরা কয়েক জন কে নির্বাচিত করেছে - কিন্তু ওরা সোজা চ্যানেল না এসে কেন এই ধরনের লুকোচুরি কেনই বা করতে চাচ্ছে তারপর আবার এটাও ভাবলাম সরকারী চ্যানেলে গেলে সব নিজস্ব রদ্দি মার্কা পেয়ে যেতে পারে - স্বজন প্রীতির তো আর  কোন শেষ নাই

জিজ্ঞেস করলো আচমকা আমার জীবনের এইম কি এখন এই মুহূর্তে বললাম - আমি এখনো পুরাপুরি সিধান্ত নেই নি   উলটা প্রশ্ন করলাম - আমি কি জানতে  পারি  কেন আমি এইখানে  ? এবার মস্তফা মুখ খুললো  ‘' বলল আমরান , তোমার একটা বাংলা থেকে ইংলিশ অনুবাদ আমি পাঠিয়েছিলাম - তোমাকে যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল গুলোর উপর একটা বাংলা বই এর অনুবাদ করতে দিয়েছিলাম - ওটা উনি কোন  না কোন ভাবে দেখেছেন এবং তারপর আমাকে দিল্লিতে ওনার সাথে দেখা করতে বললেন এবং তোমাকে এখানে নিয়ে উনার সাথে পরিচয় করাবার জন্য বললেন - তখনি আমি ঢাকায় যোগাযোগ করে তোমার মতামত জানতে বললাম  - তুমি আসতে রাজী হওয়ায় আমরা দিল্লী থেকে বম্বে তে দুই এক টা আরও ইন্তেরভিউ নিয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম তুমি এসে পৌছার জন্য আরও বলল যে, ওদের এই বস ঢাকার চেয়ে বম্বে ওয়েদার পছন্দ করেন বেশি তাই এখানেই দেখা হবার বেবস্থা করলাম হোপ ইউ আর ওকে আবাউট ইট ? মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম


তারপরও আমি বুঝতে পারছিলাম না - আমাকে দিয়ে ওরা কি করবে   আমি কেন এখানে ? ইচ্ছে করেই নিজের অস্থিরতা টাকে ওদের বুঝতে দিচ্ছিলাম না এবার খুব ইচ্ছে হল একটা সিগারেট খাবার পকেট থেকে প্যাকেট টা বের করে ওদের দুই জনকেই অফার করলামনতুন জন একটা নিলেন - মস্তাফা সিগারেট পান করেন না - নাকি করেন আমি জানতাম না সে নিলো না - অতিথি কে প্রথমে অগ্নিসংযোগ করে নিজের টা ধরিয়ে আস্তে আস্তে দু টা ফু দিয়ে তাকালাম নবাগত অতিথির দিকে সেও দেখলাম মনের সুখে কয়েক টা টান মেরে যাচ্ছেন কেমন যেন মনে হোল - হি ইয এন অ্যামেচার স্মকার একটু হাসি পেল সিগারেট পান করা সব সময়ই আমার কাছে ছিল একটা স্টাইল স্টেটমেন্ট তাই ওর স্টাইল দেখেই ধরে ফেললাম


 খুবই সুন্দর গলা ওয়ালা এক মহিলা  গেয়ে উঠল , ''চুরা লিয়া হে ……… তুম্নে যো দিল কো……’'   মনের অজান্তেই এক ঝলক হৃদয়ের  পর্দায় ভেসে উঠল  টাইমলেস  বিউটি কুইন জিনাত আমানের সেই অবয়ব খানা - আমার ওল টাইম ফেভারেট সিলেটের মিউজিক বারে কত শত বার  যে শুনেছি আর ফাতেহ’  যে কত কপি  যে কপি /রেকর্ড  করেছে  তার হিশেব নাই ; সহসা মনে পড়লো সেই সকল অতি চেনা মুখ গুলো গানের মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিটের জন্য - নিজের অজান্তে - প্রশ্ন কর্তার কথায় বাস্তবে ফিরে এলাম - ইয়াদুন কি বাড়াত ছবির কল্পনার জগত থেকে……

শো, লেফটেন্যান্ট - মে আই আস্ক ইউ সাম থিং ? বললাম , বাই ওল মিন্স স্যার। প্লেজার ওয়িল ওল বি মাইন
কয়েক সেকেন্ড থেমে সে বলল - ওয়িল ইউ জয়েন মাই টিম ইন মাই কান্ট্রি ? এজ টিচার টিচিং ইংলিশ / মিলিটারি হিস্ট্রি - টু দে ক্যাডেটস। আই শ্যাল এক্সপ্লেন মোর ইফ ইউ এগ্রি -  

ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম ; সেই ৩০ বছর এই প্রথম বলছি আর লিখছি কিন্তু এখনো গায়ের লোম শিহরে উঠে সেই মুহূর্ত টার কথা মনে করলে থমকে  গেলাম আনন্দে বিহ্বল আশ্চর্যে আচম্বিত - উল্লাসে খানখান হবার প্রায় অবস্থা মেঘ না চাইতেই যেন বৃষ্টি চিমটি কেটে উপলব্ধি করতে ইচ্ছে করছিলো আদৌ কি আমি প্রকিতস্থ  আছি কি না  


নির্লিপ্ত একটা ভাব দেখালাম - বললাম আই হেভ টু থিংক স্যার - আই এম ওভার হয়েল্মড কিন্তু কিভাবে যাবো - সরকারী ভাবে না বেসরকারি ভাবে - তারপর যদি অন্য কাজে নিয়োগ করে ? কি বিশ্বাস এদের কে

ম্যান পাওয়ার মন্ত্রণালয় ছাড়পত্র এইসব আমলাতান্ত্রিক বিষয় নিয়ে অযথা ভাবতে লাগলাম কয়েক মিনিটের মধ্যেই - তারপর ভাবলাম - এইডা বাংলাদেশ কে কার খোঁজ রাখে - বন্ধু রশিদ রাত দিন গলা কাটা - নকল - চোরাই - পাসপোর্ট দিয়ে মানুষ লন্ডন - আমেরিকা - দুবাই - কাতার - কুয়েত- রাশিয়া - বেলজিয়াম পাঠাচ্ছে - কোন দিন তো কোন মন্ত্রণালয়ে যেতে শুনিনি - আমার মত চুনোপুঁটির খোঁজ কে বা রাখবে - আর রাখলেই বা কি ডু আই রেএলি কেয়ার


আমি যামু গা - চিন্তা করে ফেললাম মুহূর্তেই

বললাম - ওকে স্যার আই উইল গিভ ইয়োর প্রপোজিশন ট্রাই  


আমার আশ্বাসে বেশ আসস্থ হোল বলে মনে হোল – আরও কয়েক গ্লাস রেড ওয়াইন পান করলো ওরা আমি আমার অরেঞ্জ জুস থেকে লাচ্ছি তে মননিবেশ করলাম – অনেক প্রাসঙ্গিক এবং অপ্রাশাঙ্গিক কথোপকথন করলাম অনেকক্ষণ – বেশ অনেক রাতে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে ডিনার শেষ করার পর হামযা রামাদান ওনার নাম বললেন । এবং অল্পখন পরই বিদায় নিলেন । হ্যান্ডসেক করার পড় আমার হাঁতে তাড় কোটের ভিতরের পকেট থেকে একটা এনভেলপ বের করে আমার হাঁতে দিলেন আর বললেন মস্তফা কাল আমার হোটেলে তোমাকে নিয়ে আসবে যখন তখন বাকি সব বিশদ ভাবে আলোচনা করবো ।
মাছ সালামা – মাছা’ আল খায়ের বলে এগিয়ে গেলেন শোফার চালিত মারসেডিস কারের দিকে । ব্রান্ড নিউ মার্সেডিস ৫৬০ এস এল গাড়ী – চক চকে সিলভার কালার লেদার সিট । মনকাড়া গাড়িটার মডেল ।
ড্রাইভার দরজা খুলে দিল – । উঠে হাত নেড়ে বাই বাই করার সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটা পর্চ থেকে মসৃণ ভাবে বেরিয়ে চলে গেল । মস্তফা জিজ্ঞেস করলো – কি কোথাও যাবে রাতে ? আমি বললাম আমি ঘুমাব – কিন্তু – চল দুই মিনিট বসে কোথাও কথা বলি – প্লিজ আমাকে একটু আরও খুলে বল না প্লিজ । একটা বিরাট হাসি দিয়ে ওকে রুমের দিকে দিকে হাঁটতে শুরু করলাম – ও বলল কাম টু মাই রুম ইন দা টপ ফ্লোরে – এসো আমার রুমে । দুজনার জন্য দুইটা ঠাণ্ডা বিয়ার বের করলো ফ্রিজ থেকে – আমাকে একটা দিল আর অন্যটা কেচ্ছাত্ত করে খুলে একটা গভীর চুমুক দিল । পেন্টহাউস প্রেসিডেন্টশিয়াল স্যুইট – বিশাল ব্যাপার শেপার – অনতিদূর সমুদ্র পর হাল ভেঙ্গে প্রমোদ তরি গুলো ভেসে বেড়াচ্ছে আরব সাগরে জোনাকি পোকার মত ডিম আলো বাতি জ্বালিয়ে – যেন ওদের নিরিবিচ্ছিন্ন চলাফেরায় সাগরের তলদেশের প্রাণীদের ঘুম জাত্যে না ভেঙ্গে যায় ; এক অপূর্ব দৃশ্য – এপ্রিলের পূর্ণ চন্দ্র দুরে করাচীর আকাশে ফুটে আছে একটা বড় বাংলা নববর্ষের হালখাতার মিষ্টি মণ্ডা লাড্ডুর পীতলের থালার মত । বাইরে বেশ গরম – রুমটা শিতাতাপ্নিয়ন্ত্রিত নাতিশিতুশ্ন – ল্যাম্পের আলো রুম টাকে স্বপ্নিল করে রেখেছে যেন – ফুলের গুলদস্তার ঘ্রাণে বিমোহিত আমি – ভাবলাম এর চাইতে মোক্ষম সময় আর কখন হতে পাড়ে একটা শীতল বিয়ার পান করার !
ওর রুমে অনেক কথা হোল – আমি বেনগাজী তে থাকব – আর্মি/বিমান এবং নেভি একাডেমী । ( সম্পূর্ণ স্পষ্ট নামটা ওদের বুঝতে পারলাম না )
বেতন শুনে তো বেকুফ – মাসে ৩৫০০ ইউ এস এ ডলার – বাসা ফ্রি , গাড়ি ফ্রি । সপ্তাহে চার দিন ক্লাস । এক দিন রিসার্চ এবং প্রিপেরারেসন ।
ঢাকায় তখন ৩০ টাকা সমান এক ডলার । দোভাষী হিশেবে তখন পাচ্ছিলাম মাত্র ৩৭৫ ডলার মাসে আর কোথায় ৩৫০০ ডলার – যদিও কোন দিনই পয়সা করির ব্যাপারে খুব একটা বৈষয়িক ছিলাম না – তবুও এই এই ওয়াটারিং এমাউনট শুনে একটু একটু হিমশিম খেয়ে উঠলাম – সঙ্গের বন্ধুরা তখন মাত্র টাকা ২৪০০.০০ পায় আর এতগুলো ডলার আমাকের বলা নাই কওয়া নাই হুইমযিকেলি দিয়ে দিবে । জানেও না আমি ক্লাস নিতে পারি কিনা আদৌ ।
আমার অনুশিন্ধিৎসু মনের প্রশ্নের আর শেষ নেই । বললাম ব্রাদার ( ঐটা ডাকলে এই বেটারা খুব খুশি হয় মনে হোল – কি আমার বারাদার ) তোমারা তো আমার সম্পর্কে কিছুই জাননা আমি কে – কোথা থেকে এসেছি – কি আমার ব্যাকগ্রাউন্ড কিছুই তো তোমরা জান না ।
অনেকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল – তোমার এক সুপিরিয়র অফিসার ( বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত ) আমাদের সোর্সের কাছে তোমার সম্পর্কে খুবই সুউচ্চ মানের মতামত পোষণ করেছে !
বিশ্বাস করতে বেশ অস্বস্তি পেতে হোল – কে এই দানবীর হাজী মোহাম্মাদ মহসিন ? তবে যেই হউক না কেন আমি তাঁর কৃপায় আজ কৃতার্থ – আজ ও জানিনা কে সেই মহানুভব দেবতা যে আমার জীবনের ঐ ক্রান্তিলঙ্গে আমার জন্য তাঁর দুটো মূল্যবান কথা বলেছিলেন । সব অ্যাপেল তো মন্দ থাকে না বাস্কেটে । কেই কেই সব মনগড়া অভিযোগ বা বানানো গল্পে বিশ্বাস করে না ।
ও আমাকে বেশ আসস্থ করল এবং বলল এই সুযোগ তুমি হাতছাড়া করো না । এটা তোমার জীবনের একটা গ্রেট অপরচুনিটি ।
আরও বলল – সে আমাকে মিস করবে কারণ আমি বেশ সহজ ভাবেই ওর ঢাকা ব্যুরোর দোভাষীর কাজ টা ম্যানেজ করছিলাম গত দু মাস যাবত – এর আগে অনেক বিশ্ব বিদ্যালয়ের ডিগ্রীধারী এমন কি অধ্যাপক – সুনাম ধন্য জাতীয়ও পর্যায়ের সাংবাদিক কি দিয়েও চেষ্টা করেও কামিয়াভ হতে পাড়ে নাই ।
বলল আমি যদি সত্যি চলে যাই তাহলে আমার জানা মত এমন কেই কি আছে যে আমার কাজটা আমার মত করতে পারবে ।
মস্তফার মুখে আমার প্রশংসা শুনে বেশ ভালো লাগল । অনেক রাত তখন ঢাকা সময় রাত ২ টা বাজে আমার ঘড়িতে ।
বিদায় নিয়ে আসার সময় বলল – এঞ্জয় দ্যা ডে – উই ওয়িল গো টু হিজ প্লেস এট ৬- ৩০ বিকালে – ও সারাদিন পুনা ‘ তে থাকবে ।
গুড নাইট
বাই বলে আমার রুমে চলে আসলাম – এনভেলপ খুলে দেখি কচকচে ডলার নোট এক হাজার ডলার ওটার ভিতর ……
খুব সকালে জানিনা কেন যে ঘুম ভেঙ্গে গেল । ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি মাত্র ৬ :১০ বাজে । উঠে পরলাম – জজ্ঞিং স্যুইট আর ট্রেনার পড়ে বের হয়ে পরলাম সকালের আরব সাগর দেখতে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি ফ্রি । হোটেল থেকে বের হয়েই ডান দিকে রাস্তা ধরে ৩ চার শ হাঁটার পড় বামে মোড় নিলে সি শোরের রাস্তা – বাতাসে সমুদ্রের হাওয়া অপূর্ব সুন্দর বাংলো গুলো রাস্তার দুই পাশে -নয়নাভিরাম বাড়ী গুলো – বই ম্যাগাজিনে বা বিজ্ঞাপনের ছবির মোট সুন্দর এই বাড়ীগুলো । প্রায় প্রত্যেক বাসাতেই গোর্খা দারওয়ান । বেশ জোড় পায়ে হেঁটেই শিগ্রই পৌঁছে গেলাম সমুদ্র তীরে ; অপরূপ তার রূপ – স্নিগ্ধ মসৃণ ঢেউ পরিছন্ন বালুকাবেলা – বেশ আদ্রতা হাওয়াই – গড়ম বেশ – শুরু করলাম দৌড়ানো টানা পঁচিশ মিনিট পড় ফেরত আসলাম হেঁটে – লোকে লোকারন্ন – সব বয়েসের মানুষরাই প্রাতঃভ্রমণে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছে ।
ঢাকায় আমরা গুটি কয়েক জন মানুষ হাঁটি সকালে ; তবে এখানকার পরিবেশই অন্য রকম – ছেলেরা মেয়েরা বেশ বেশ টাইট ফিট জজ্ঞিং স্যুইট পড়ে দৌড়াছছে ; বাংলাদেশে তখনো মহিলারা শাড়ী আর সেলোআর কামিজেই সীমাবদ্ধ ।
অনেক আবোল তাবোল ভাবনা গুলো শুধু শুধু মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল – দুরে পেছন ফিরে দেখলাম বম্বে গেট আর তাজ হোটেল টা কে ।
সন্ধ্যায় মেইন বসের সাথে এবার দেখা হবে – ; কি কথা হবে – কোন কন্ট্রাক্ট পেপার এ কি সই করতে হবে নাকি – কোন রকম বাধ্য বাধকতা এবার থাকবে না তো ; যদি আমার ভালো না লাগে তাহলে কি আমাকের ফেরত এসতে দিবে এই বেটারা । আবার টিচিং করবার কথা বলে নিয়ে গিয়ে না এবার যুদ্ধে পাঠিয়ে দেয় । মাস গেলে ঠিকমত বেতন দিবে কিনা ; এদের কি বিশ্বাস করা যায় ?
এইসব ভাবতে ভাবতে হোটেলে ফিরে এসে রেডি নীচে নেমে বূফে’ নাশতা কড়ে বেড় হয়ে পড়লাম – হোটেলের বাইরে এসেই ট্যাক্সি তে চেপে বসলাম বললাম নিয়ে চলো বোম্বে গেটে – রাস্তায় একা একা আবার ও হারিয়ে গেলাম আমার সেই পূরানো চিন্তায় – কোথায় যাচ্ছে আমার জীবন ; হটাত মনে পড়লো পুনা তে তো এক পাহাড়ি বন্ধু আছে ফিল্ম এডিটিং এর উপর ডিগ্রী নিতে এসেছিলো । ভাবলাম যদি সময় পাই তা হলে একটা ঢু’ মাড়বো ।
ভীষণ ভাপসা গরম – বোম্বে গেটে অনেক হাঁটা হাটী করলাম – বসে বসে অথৈ সাগর এর রূপ দেখলাম নয়ন ভরে । কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত আর এটা ভিন্ন ;
একটা রেস্টুরেন্ট এ ঢুকে পাউ ভাজি খেয়ে – আবার একটা ট্যাক্সি তে উঠে বললাম হাজী আলি দরগা মে লে চলো – ।
দরগার প্রতি আমার দুর্বলতা সারা জীবনের – সেই প্যাঁচ- ছয় – সাঁত বছর বয়েসেই আমার যাওয়া শুরু হয়েছিল সিলেট এ – কায়দা – শিফারা থেকে শুরু করে সব ধর্মীয় শিক্ষাই আমার শুরু হয়েছিল এই রকম একটা পবিত্র মাজারে – তাই কোন কিছু না ভেবেই রওনা দিলাম ওনার মাজারে ।
এই রকম জীবনের ক্রান্তিলগ্ননে স্বভাবতই মন খুঁজে বেড়ায় অলৌকিক হাতের ইশারা বা সফেদ ধবধবে পোশাক পরিহিত এক নুরানি চেহারা ওয়ালা এক অজানা মহামতির আশীর্বাদ ……
হাজী আলীর দরগাহ এক ভিন্ন জগত । অনেকক্ষণ নিভৃতে একাকী নিজের সাথে সময় কাটালাম – ভাবলাম অনেক কিছু । অপূর্ব নির্মাণশৈলী সাগরের মধ্যে মাজার – ভাটার সময়ই শুধু হেঁটে হেঁটে যাওয়া যায় । জোয়ার আসার আগেই ফিরতে হয় – ধর্ম , বর্ণ জাতি ভেদ বলতে কিছুই নাই – অনেক ক্ষণ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম ইন্দো – আরব – মধ্য এশিয়া – এশিয়া মাইনর এলাকার আর্কিটেকচার এর সংমিশ্রণের বানানো এই প্রাসাদ তুল্য দালান কোঠা । গানে বাজনায় মশগুল – মারফতি গান – সুফি নাচ এক অপূর্ব মিশ্রণ – অভিভূত । হিন্দিতে চেঁচিয়ে বলল জভার আনেকে ওয়াক্ত আসছে । যারা ফেরত যেতে চান তারা অনুগ্রহপূর্বক এখুনি যাত্রা শুরু করুন । ফেরত আসার সময় দুরে বোম্বাই এর দৃশ এবং শহর কে অপূর্ব লাগল – ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি সময় মাত্র ৩- ৩০ মিনিট ভাবলাম – হাঁতে এখনো দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা আছে – জোড়ে হেঁটে পাড়ে এসে একটা এম্বাসাদডার ট্যাক্সি নিয়ে রওনা দিলাম – আর কে স্টুডিও দেখতে – সারা জীবন ই দেখেছি লিজেন্ডারি রাজ কাপুড়ের ফিল্ম -আওয়ারা, মেরি নাম জোকার, শ্রী ৪২০ এইসব দেখতাম আর ভাবতাম ঈশ জীবনে যদি কখনো বোম্বাই যাই তাহলে এই রাজ কাপুড়ের স্মৃতি বিজড়িত স্টুডিও টা একবার হলেও দেখে আসব – আমার মায়ের খুব প্রিয় নায়ক রাজ কাপুর – কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দ মেলা ম্যাগাজিনে প্রত্যেক সংখ্যাতেই কিছু না কিছু লেখা হতো রাজ কাপুর এবং তাঁর প্রেমিকা নার্গিস, জিনাত আমান , বৈজয়ন্তী মালা , পাদ্মিনি এইসব পড়ে অত্যন্ত উৎসুক ছিলাম সর্বদা । বাসায় রেডিওতে , রেকর্ড প্লেয়ার এ কত হাজার বার যে শুনেছি ওর গান
আওয়ারা হু, দুনিয়া বানানে ওয়ালে , দোস্ত দোস্ত না রাহা পেয়ার পেয়ার না রাহা , জানে কাহা জ্ঞায়ে ও দিন কইতে তে রাহামে ………
তাই আর লোভ সামলাতে পারলাম না । একবার যদি দেখে আসি তাহলে মনের শখ পুড়ন হবে – তখনকার বোম্বে এত ঘিঞ্জি ছিল না – বেশ সহজেই পৌঁছে গেলাম – গেঁটে যেয়ে অনেকক্ষণ হেঁটে দেখলাম – সুযোগ বুঝে ভিতরে ঢুকার বন্দোবস্ত করে ফেললাম – পকেটে তো ডলারের আর কোন অভাব নাই – টেকা দিবে গৌরি সেন ।
মনে হল একটা মিউজিউম এ ঢুকলাম – রাজ কাপুর, পৃথ্বীরাজ কাপুর , শাম্মি কাপুর সে বিশাল একেকটা ক্যানভাস, উর্বশী নার্গিস এর মুরাল, মন্দাকিনী থেকে শুরু করে জিনাত আমান , পদ্মিনী কোলাপুরি সব গুলো মানুষ গুলো মনে হল যেন জ্যান্ত দাঁড়িয়ে আছে – কি একেকটা আর্ট, সেট গুলো দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে ।
মন টা জুড়িয়ে গেল – ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বেলা বেশী নেই হাঁতে – ভাগ্য ভালো গুজরাটি ট্যাক্সি ওয়ালা কে বলেছিলাম অপেক্ষা করার জন্য যাতে সময় ক্ষেপণ না করতে হয় ট্যাক্সি খুঁজতে । নামটা ড্রাইভারটার অনেকদিন পর্যন্ত মনে ছিল কিন্তু এখন লেখতে যেয়ে কোন ভাবেই আর ওর নামটা মনে করতে পারছিনা । গেট থেকে বের হয়েই দেখি গেঁটের বাইরের চায়ের দোকানে পায়ের উপর পা উঠিয়ে বসে বসে চা পান করছে । সেই আমাকে ভিতরে ঢুকার ফন্দি টা বাতিয়ে দিয়েছিলো এবং দারওয়ান কে বকসিস টা সেই দর কষাকষি করে দিয়েছিলো ।
ট্যাক্সি তে শাই শাই করে চলে আসলাম হোটেলে । তরিঘড়ি করে ফ্রেশ হয়ে পোশাক চেঞ্জ করে পেন্টহাউস এর প্রেসিডেন্টশিয়াল স্যুইট গেলাম – রুমের দরজায় আস্তে করে টোকা দিতেই দরজাটা খুলে দিলেন এক মহিলা – একটা ভুবন মোহিনী হাঁসি হেসে বলল প্লিজ কাম ইন এন্ড প্লিজ টেক সিট – হি উইল কাম ইন এ ফিউ মিনিট । উড লাইক টি ওর কফি ।
থ্যাঙ্কস বলে বললাম কফি প্লিজ – সোফায় আরামে বসলাম আর হাতের কাছে রাখা ফার ইস্টার্ন একন্মিক রিভুই এর পাতা গুলো উলটাতে থাকলাম – পরনে আমার শাদা শার্ট – নেভি ব্লু ( আমার প্রিয় কালার) ব্লেজার আর গ্রে গেভা’রডিন এর ট্রাউযার – ব্ল্যাক অক্সফোর্ড চক চকে পলিস করা জুতা -চুল বেশ বড় – সাইড ফ্লিক স্টাইলে – আমি নিজেকে নিজেই আয়নাতে দেখে ইমপ্রেসেড । পেটানো শরীর – ওয়েস্টার্ন ফিল্মের হিরো দেড় মত চিরাচরিত শক্ত চোয়াল – একটু বসে যাওয়া চিক্স – ক্লিন শেভেন । ওয়েল মেনিকিয়রড এন্ড স্টাইলড ; আমার স্যার বলতেন সব সময় আমার হোম ওয়ার্ক দেখে – তোমরা দেখো মুন্নার বাড়ির কাজ – ও যেমন পরিচ্ছন্ন ওর হোম ওয়ার্ক কি তেমনি পরিছন্ন – বলতেন ”হ্যান্ডসাম ইজ দ্যেট হ্যান্ডসাম ডাজ ”।
কফিটা শেষ করার আগেই চলে এলেন উনি – বলল লেটস গো । লিফটে ঢুঁকে কথা বলল – বলল যে আমরা ডিনার খাবো তাজ হোটেলে তার পড় কথা হবে ওর রুমে বসে – আরও জিগ্যেস করলো আমার কি কি প্রশ্ন আছে তা সব ভালো ভাবে জেনে নিতে ; আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম আমার সব গুলো সন্দেহ গুলো গাড়িতে উঠে । সাউন্ড প্রুফ মারছিডিজ । সিল্কের মত মসৃণ গতিতে চলছে – মনে মনে ভাবলাম এক দিন আমাকে হতে হবে এই রকম একটা মারছেডিজ গাড়ির গর্বিত মালিক ।
কখন যে পৌঁছে গেলাম তাজ এ বুঝতেই পারলাম না – সারা পথ ওর কোথায় বেশ আশস্থ হলাম । বুঝলাম এরা আমার ব্যাপারে সিরিয়াস । তা না হলে এত আড়ম্বর করে ঘটা করবে কোন দুঃখে ।
লবিতে একটা সোফাই বসে আছেন উনি হ্যান্ডশেখ করে বসলাম পাশে – খুবই আন্তরিকতার সাথে কথোপকথন করলেন ।
ডিনার খেয়ে লবিতে বসে কফি পান করছিলাম আর ভাবছিলাম অনেক বছর আগে একটা বই এ টাটা কোম্পানির ইতিহাস পরেছিলাম – মিস্টার টাটা একদিন এসপ্ল্যানেড ম্যানশন হোটেল ( আজকের তাজ হোটেলের পাশেই কোথাও ছিল এক সময়) এ প্রবেশ করতে ছেয়েছিল তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি কারণ ইংরেজদের ঐ হোটেলে কোন ইন্ডিয়ান দেড় ঢুকতে দিত না – বর্ণবৈষম্য – রাগ করে মিস্টার টাটা সেই এসপ্ল্যানেড ম্যানশন এর ঠিক উলটো পাশেই বানিয়ে ফেললো টাটা তাজ ল্যান্ডস নামের এই হোটেল আর আজ আমি সেই তাজ হোটেলে বসে বসে কফি খাচ্ছি । কি পরিহাস আর দেখলাম হোটেলের ম্যানেজার এবং বয় বেয়ারা অনেকেই সাদা চামড়া ওয়ালা – ইতিহাস তুমি হাসছ আজ মুচকি মুচকি কি ?
কফি শেষ করে উপড়ে রুমে যেয়ে বসলাম আমরা তিনজন – রুম সার্ভিস এসে আরও অনেক কেক, আইস ক্রিম, ফ্রুট কফি সারভ করে গেল ।
ওরা শাটিয়ে পান করছে বিয়ার – ওয়াইন এবং হুইস্কি আর আমি কফিতেই সীমাবদ্ধ থেকে গেলাম ইচ্ছে করেই – । সময় টা আমার খুবই একটি অতীব দুর্লভ তাই শরীরে বিদেশী কোন প্রকার পানীও ঢুকতে দিয়ে নিজের উপর নিজের কন্ট্রোল ক্ষুণ্ণ করার ইচ্ছা আমার ছিল না ।
বিরাট একটা কন্ট্রাক্ট এগিয়ে দিল আমার দিকে সাত পাতা – ওদের দেশের সবুজ সিল ছাপ্পর মারা লেটার হেডএ টাইপ করা ।
সবই ঠিক কিন্তু খটকা লাগলো অন্য জায়গায় – নাই বা বললাম সেই অংশ টুকু – খটকাটা পড়ে একদিন বলব না হয় ।
সাদা একটা কাগজে আমার নাম এবং ঠিকানা লিখতে বলল লিখে দিলাম – হাতের লেখা দেখে একটু প্রশংসা করলো ;
কন্ট্রাক্ট অনেক লং টার্ম – আমার মাথায় তখন ঘুরপাক খাচ্ছে – লং বা শর্ট আমার তা তে কিছুই আসে যায় না ।
বেতন, ভাতা, বাড়ি ও গাড়ি আর তার সাথে কাজের ফর্দ অনেক ছোট – মনে মনে ভাবলাম আমার পুরনো চাকরীতে এতদিনে সর্ব সাকুল্যে তিন হাজার হয়ত পেতাম – ; আর এদের কন্ট্রাক্ট দেখে আমি আনন্দের আতিশয্যে বিহ্বল ।
কোন আর চিন্তা করে সময় ক্ষেপণ করতে গেলাম না । ঢাকার চাকরীদাতা টেলিফোনে ডেকে আনলেন আমার সহযাত্রী কে সে আমার ঠিকানা আর কন্ট্রাক্ট নিয়ে চলে গেল – এতক্ষণ এ আমাকে বলা হল আগামী দুই মাসের ভিতর আমি ফ্লাই করবো – নতুন পাসপোর্ট , আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্সে, এমেক্স এ একাউন্ট সব ওড়াই বেবস্থা করে দিবে । টাইপ করে নিয়ে আসলো কন্ট্রাক্ট – দুই মিনিটের মত একবার ভালো করে পড়ে ; মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে বললাম আই এম রেডি টু সাইন …।
ঘশাঘশ করে সিগনেচার করে এগিয়ে দিলাম ওদের দিকে ; বলল ধন্যবাদ – সে তার সই করে । বলল এই নেও তোমার কপি সুন্দর করে একটা লেফাফায় ঢুকিয়ে আমার হাঁতে দিল –
উঠে হ্যান্ডসেক করলো – আর বলল, থ্যাঙ্ক ইউ । আই শেল ওয়েট টু ওয়েল কাম ইউ ইন বেনগাজি – গড উইল্লিং ।
পরদিন বিকালে ঢাকার উদ্দেশে প্লেনে বসে বসে জানালা দিয়ে বোম্বে শহর কে বিদায় জানিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় প্রহর গোনা শুরু করলাম নতুন জীবনে কে শুভাগমন জানাবার জন্য.


হাজী আলীর দরগাহ এক ভিন্ন জগত । অনেকক্ষণ নিভৃতে একাকী নিজের সাথে সময় কাটালাম – ভাবলাম অনেক কিছু । অপূর্ব নির্মাণশৈলী সাগরের মধ্যে মাজার – ভাটার সময়ই শুধু হেঁটে হেঁটে যাওয়া যায় । জোয়ার আসার আগেই ফিরতে হয় – ধর্ম , বর্ণ জাতি ভেদ বলতে কিছুই নাই – অনেক ক্ষণ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম ইন্দো – আরব – মধ্য এশিয়া – এশিয়া মাইনর এলাকার আর্কিটেকচার এর সংমিশ্রণের বানানো এই প্রাসাদ তুল্য দালান কোঠা । গানে বাজনায় মশগুল – মারফতি গান – সুফি নাচ এক অপূর্ব মিশ্রণ – অভিভূত । হিন্দিতে চেঁচিয়ে বলল জভার আনেকে ওয়াক্ত আসছে । যারা ফেরত যেতে চান তারা অনুগ্রহপূর্বক এখুনি যাত্রা শুরু করুন । ফেরত আসার সময় দুরে বোম্বাই এর দৃশ এবং শহর কে অপূর্ব লাগল – ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি সময় মাত্র ৩- ৩০ মিনিট ভাবলাম – হাঁতে এখনো দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা আছে – জোড়ে হেঁটে পাড়ে এসে একটা এম্বাসাদডার ট্যাক্সি নিয়ে রওনা দিলাম – আর কে স্টুডিও দেখতে – সারা জীবন ই দেখেছি লিজেন্ডারি রাজ কাপুড়ের ফিল্ম -আওয়ারা, মেরি নাম জোকার, শ্রী ৪২০ এইসব দেখতাম আর ভাবতাম ঈশ জীবনে যদি কখনো বোম্বাই যাই তাহলে এই রাজ কাপুড়ের স্মৃতি বিজড়িত স্টুডিও টা একবার হলেও দেখে আসব – আমার মায়ের খুব প্রিয় নায়ক রাজ কাপুর – কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দলোক ম্যাগাজিনে প্রত্যেক সংখ্যাতেই কিছু না কিছু লেখা হতো রাজ কাপুর এবং তাঁর প্রেমিকা নার্গিস, জিনাত আমান , বৈজয়ন্তী মালা , পাদ্মিনি এইসব পড়ে অত্যন্ত উৎসুক ছিলাম সর্বদা । বাসায় রেডিওতে , রেকর্ড প্লেয়ার এ কত হাজার বার যে শুনেছি ওর গান
আওয়ারা হু, দুনিয়া বানানে ওয়ালে , দোস্ত দোস্ত না রাহা পেয়ার পেয়ার না রাহা , জানে কাহা জ্ঞায়ে ও দিন কইতে তে রাহামে ………
তাই আর লোভ সামলাতে পারলাম না । একবার যদি দেখে আসি তাহলে মনের শখ পুড়ন হবে – তখনকার বোম্বে এত ঘিঞ্জি ছিল না – বেশ সহজেই পৌঁছে গেলাম – গেঁটে যেয়ে অনেকক্ষণ হেঁটে দেখলাম – সুযোগ বুঝে ভিতরে ঢুকার বন্দোবস্ত করে ফেললাম – পকেটে তো ডলারের আর কোন অভাব নাই – টেকা দিবে গৌরি সেন ।
মনে হল একটা মিউজিউম এ ঢুকলাম – রাজ কাপুর, পৃথ্বীরাজ কাপুর , শাম্মি কাপুর সে বিশাল একেকটা ক্যানভাস, উর্বশী নার্গিস এর মুরাল, মন্দাকিনী থেকে শুরু করে জিনাত আমান , পদ্মিনী কোলাপুরি সব গুলো মানুষ গুলো মনে হল যেন জ্যান্ত দাঁড়িয়ে আছে – কি একেকটা আর্ট, সেট গুলো দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে ।
মন টা জুড়িয়ে গেল – ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বেলা বেশী নেই হাঁতে – ভাগ্য ভালো গুজরাটি ট্যাক্সি ওয়ালা কে বলেছিলাম অপেক্ষা করার জন্য যাতে সময় ক্ষেপণ না করতে হয় ট্যাক্সি খুঁজতে । নামটা ড্রাইভারটার অনেকদিন পর্যন্ত মনে ছিল কিন্তু এখন লেখতে যেয়ে কোন ভাবেই আর ওর নামটা মনে করতে পারছিনা । গেট থেকে বের হয়েই দেখি গেঁটের বাইরের চায়ের দোকানে পায়ের উপর পা উঠিয়ে বসে বসে চা পান করছে । সেই আমাকে ভিতরে ঢুকার ফন্দি টা বাতিয়ে দিয়েছিলো এবং দারওয়ান কে বকসিস টা সেই দর কষাকষি করে দিয়েছিলো ।
ট্যাক্সি তে শাই শাই করে চলে আসলাম হোটেলে । তরিঘড়ি করে ফ্রেশ হয়ে পোশাক চেঞ্জ করে পেন্টহাউস এর প্রেসিডেন্টশিয়াল স্যুইট গেলাম – রুমের দরজায় আস্তে করে টোকা দিতেই দরজাটা খুলে দিলেন এক মহিলা – একটা ভুবন মোহিনী হাঁসি হেসে বলল প্লিজ কাম ইন এন্ড প্লিজ টেক সিট – হি উইল কাম ইন এ ফিউ মিনিট । উড লাইক টি ওর কফি ।
থ্যাঙ্কস বলে বললাম কফি প্লিজ – সোফায় আরামে বসলাম আর হাতের কাছে রাখা ফার ইস্টার্ন একন্মিক রিভুই এর পাতা গুলো উলটাতে থাকলাম – পরনে আমার শাদা শার্ট – নেভি ব্লু ( আমার প্রিয় কালার) ব্লেজার আর গ্রে গেভা’রডিন এর ট্রাউযার – ব্ল্যাক অক্সফোর্ড চক চকে পলিস করা জুতা -চুল বেশ বড় – সাইড ফ্লিক স্টাইলে – আমি নিজেকে নিজেই আয়নাতে দেখে ইমপ্রেসেড । পেটানো শরীর – ওয়েস্টার্ন ফিল্মের হিরো দেড় মত চিরাচরিত শক্ত চোয়াল – একটু বসে যাওয়া চিক্স – ক্লিন শেভেন । ওয়েল মেনিকিয়রড এন্ড স্টাইলড ; আমার স্যার বলতেন সব সময় আমার হোম ওয়ার্ক দেখে – তোমরা দেখো মুন্নার বাড়ির কাজ – ও যেমন পরিচ্ছন্ন ওর হোম ওয়ার্ক কি তেমনি পরিছন্ন – বলতেন ”হ্যান্ডসাম ইজ দ্যেট হ্যান্ডসাম ডাজ ”।
কফিটা শেষ করার আগেই চলে এলেন উনি – বলল লেটস গো । লিফটে ঢুঁকে কথা বলল – বলল যে আমরা ডিনার খাবো তাজ হোটেলে তার পড় কথা হবে ওর রুমে বসে – আরও জিগ্যেস করলো আমার কি কি প্রশ্ন আছে তা সব ভালো ভাবে জেনে নিতে ; আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম আমার সব গুলো সন্দেহ গুলো গাড়িতে উঠে । সাউন্ড প্রুফ মারছিডিজ । সিল্কের মত মসৃণ গতিতে চলছে – মনে মনে ভাবলাম এক দিন আমাকে হতে হবে এই রকম একটা মারছেডিজ গাড়ির গর্বিত মালিক ।
কখন যে পৌঁছে গেলাম তাজ এ বুঝতেই পারলাম না – সারা পথ ওর কোথায় বেশ আশস্থ হলাম । বুঝলাম এরা আমার ব্যাপারে সিরিয়াস । তা না হলে এত আড়ম্বর করে ঘটা করবে কোন দুঃখে ।
লবিতে একটা সোফাই বসে আছেন উনি হ্যান্ডশেখ করে বসলাম পাশে – খুবই আন্তরিকতার সাথে কথোপকথন করলেন ।
ডিনার খেয়ে লবিতে বসে কফি পান করছিলাম আর ভাবছিলাম অনেক বছর আগে একটা বই এ টাটা কোম্পানির ইতিহাস পরেছিলাম – মিস্টার টাটা একদিন এসপ্ল্যানেড ম্যানশন হোটেল ( আজকের তাজ হোটেলের পাশেই কোথাও ছিল এক সময়) এ প্রবেশ করতে ছেয়েছিল তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি কারণ ইংরেজদের ঐ হোটেলে কোন ইন্ডিয়ান দেড় ঢুকতে দিত না – বর্ণবৈষম্য – রাগ করে মিস্টার টাটা সেই এসপ্ল্যানেড ম্যানশন এর ঠিক উলটো পাশেই বানিয়ে ফেললো টাটা তাজ ল্যান্ডস নামের এই হোটেল আর আজ আমি সেই তাজ হোটেলে বসে বসে কফি খাচ্ছি । কি পরিহাস আর দেখলাম হোটেলের ম্যানেজার এবং বয় বেয়ারা অনেকেই সাদা চামড়া ওয়ালা – ইতিহাস তুমি হাসছ আজ মুচকি মুচকি কি ?
কফি শেষ করে উপড়ে রুমে যেয়ে বসলাম আমরা তিনজন – রুম সার্ভিস এসে আরও অনেক কেক, আইস ক্রিম, ফ্রুট কফি সারভ করে গেল ।
ওরা শাটিয়ে পান করছে বিয়ার – ওয়াইন এবং হুইস্কি আর আমি কফিতেই সীমাবদ্ধ থেকে গেলাম ইচ্ছে করেই – । সময় টা আমার খুবই একটি অতীব দুর্লভ তাই শরীরে বিদেশী কোন প্রকার পানীও ঢুকতে দিয়ে নিজের উপর নিজের কন্ট্রোল ক্ষুণ্ণ করার ইচ্ছা আমার ছিল না ।
বিরাট একটা কন্ট্রাক্ট এগিয়ে দিল আমার দিকে সাত পাতা – ওদের দেশের সবুজ সিল ছাপ্পর মারা লেটার হেডএ টাইপ করা ।
সবই ঠিক কিন্তু খটকা লাগলো অন্য জায়গায় – নাই বা বললাম সেই অংশ টুকু – খটকাটা পড়ে একদিন বলব না হয় ।
সাদা একটা কাগজে আমার নাম এবং ঠিকানা লিখতে বলল লিখে দিলাম – হাতের লেখা দেখে একটু প্রশংসা করলো ;
কন্ট্রাক্ট অনেক লং টার্ম – আমার মাথায় তখন ঘুরপাক খাচ্ছে – লং বা শর্ট আমার তা তে কিছুই আসে যায় না ।
বেতন, ভাতা, বাড়ি ও গাড়ি আর তার সাথে কাজের ফর্দ অনেক ছোট – মনে মনে ভাবলাম আমার পুরনো চাকরীতে এতদিনে সর্ব সাকুল্যে তিন হাজার হয়ত পেতাম – ; আর এদের কন্ট্রাক্ট দেখে আমি আনন্দের আতিশয্যে বিহ্বল ।
কোন আর চিন্তা করে সময় ক্ষেপণ করতে গেলাম না । ঢাকার চাকরীদাতা টেলিফোনে ডেকে আনলেন আমার সহযাত্রী কে সে আমার ঠিকানা আর কন্ট্রাক্ট নিয়ে চলে গেল – এতক্ষণ এ আমাকে বলা হল আগামী দুই মাসের ভিতর আমি ফ্লাই করবো – নতুন পাসপোর্ট , আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্সে, এমেক্স এ একাউন্ট সব ওড়াই বেবস্থা করে দিবে । টাইপ করে নিয়ে আসলো কন্ট্রাক্ট – দুই মিনিটের মত একবার ভালো করে পড়ে ; মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে বললাম আই এম রেডি টু সাইন …।
ঘশাঘশ করে সিগনেচার করে এগিয়ে দিলাম ওদের দিকে ; বলল ধন্যবাদ – সে তার সই করে । বলল এই নেও তোমার কপি সুন্দর করে একটা লেফাফায় ঢুকিয়ে আমার হাঁতে দিল –
উঠে হ্যান্ডসেক করলো – আর বলল, থ্যাঙ্ক ইউ । আই শেল ওয়েট টু ওয়েল কাম ইউ ইন বেনগাজি – গড উইল্লিং ।
পরদিন বিকালে ঢাকার উদ্দেশে প্লেনে বসে বসে জানালা দিয়ে বোম্বে শহর কে বিদায় জানিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় প্রহর গোনাবোম্বে থেকে ঢাকা আসা পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্যও স্থির হয়ে বসতে পারলছিলাম না – পাশের ছিটে বসেছিল একজন গম্ভীর একজন ভদ্র লোক প্লেন আকাশে উঠার দুই মিনিট পড়েই ঘুমিয়ে পরলেন আর সে যে কি বিকট নাক ডাকা । বি ও এ শী এখন ব্রিটিশ এয়েরঅয়েস নতুন কেবল বঙ্গ ললনা দেড় বিমান বালা হিশেবে নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছে – তাকিয়ে দেখি হঠাত মহিলাটাকে চিনা চিনা লাগে – পাশ দিয়ে যাবার সময় হ্যালো বললাম – আর যাই কই – আরে মুন্না না তুই ? বললাম চিনতে পেরেছ রেহানা আপা – আমার এক দুই বছরের বড় – এক সময় আমরা পাশাপাশি বাড়িতে থাকতাম – আমি অনেক দিন আগে মন্নুর সাথে ভার্সিটিতে দেখা করতে যেয়ে টি এস টি তে দেখেছিলাম – বলেছিলেন ইংলিশ এ অনার্স দিচ্ছেন সে বছর – প্রায় আমার সমান ৫’ -১১” লম্বা, বব কাট চুল, মৃগের মত চোখ – আওয়ার গ্লাসের মত ফিগার – যে কোন পুরুষের হৃদযন্ত্রের গতি বাড়িয়ে দেওয়া একটা নিছক ব্যাপার ওনার জন্য । হাতের সিগারেট লুকিয়ে ফেললাম ; বলল খাও বাবা আর ঢং করতে হবে না । বললাম তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে বিমান বালার আঁটসাঁট শাড়ীতে । হাসল বলল এসো পিছনে বসে কথা বলি । ভাগ্যটা খুবই ভালো আমার বলতে হবে – নাক ডাকার জালায় আমি তখন অস্থির – পিছনে যেয়ে ওদের জন্য সংরক্ষিত সিটে বসে চুটিয়ে গল্প করলাম আর এটা ওটা খেলাম – বেশ স্মার্ট মেয়ে – বিয়ে হয়নি তখনো – কেবল মাস্টার্স পাশ কড়েই এই চাকরীতে ঢুঁকে গেছে – ঢাকায় এসে পৌঁছলাম সেই গভীর রাত – বেবি ট্যাক্সি নিয়ে ঘরে ফিরলাম – ব্যাচেলর এর বাসা – একটা বাংলো দুই টা রুম – একটা বেড রুম আর ড্রইং রুম ছোট রান্নাঘর একটা বিশাল একটা ১৫ কাঠা প্লট – এক নামকরা মালিকের আমি ভাড়াটে । থাকি আমি একা – আর আছে বুয়া এবং আমার ভালেট ।
রাতে আনন্দের আতিশয্যে তো আর ঘুম আসলো না – লিবিয়া চলে যাচ্ছি এইতো কয় দিন পড় – পিছনে ফেলে যাবো সবকিছু কে । কিন্তু বার বার আমি ওদের বলেছি পোশাক পড়তে আমি চাই না । পরদিন আবার রেহানা দেখা করতে বলেছেন সন্ধ্যায় চা খাওয়াবেন ইন্টারকণ এর সুইমিং পুলে । ওনাকে প্রায় বলতে যেয়েও বলি নাই আমার নতুন এডভেঞ্চার এর কথা ; ধাহা একটা কঠিন গল্প বলেছিলাম ওকে ; মনে হল সে বেমালুম বিশ্বাস করেছে ।
ভাবলাম চা পান করার সময় সব বলব – প্লেনে গল্প করার সময় আমার আঙ্গুল থেকে নিয়ে সিগারেটে এ চার পাঁচটা বড় বড় টান মেরেছিল । বেশ এক্সছাইটিং । ধুমা টা নির্গমন করার সময় একটা ভুবন মোহনি হাঁসি দিয়েছিলো আর তাঁর বিশাল টানা টানা বাম চোখটা টিপ মেরেছিল দুষ্টামিতে ভরা অভিবেক্তিতে – মনে পরল সেই ছোট্ট বেলা থেকেই রেহানা ছিল একটা টমবয় টাইপের মাইয়া । যদিও বহুদিন পড় দেখা ওর তারুণ্য দেখে বেশ ভালো লাগল । অনেক ক্ষণ হাসাহাসি করেছিলাম প্লেনে – আমি অনেক পুরানো পারার মেয়ে আর ছেলেদের বিভিন্ন কার্যকলাপ অভিনয় করে দেখাছিল্লাম আর দুজনা মিলে হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছিলাম – খাদিম্ নগরে পাহাড়ের উপড়ে ছিল ওদের বাসা । রাজু ওর ভাই আমি খেলতাম ঐ পাহাড়ে আর স্পিডে সাইকেল চালিয়ে পাহাড়ের ঢালু তে ঝরের গতিতে নামার প্রতিযোগিতা করতাম । তারপর ওরা ঢাকা তে বদলি হয়ে গেল । মাত্র কয়েক বার দেখা ; রাজু ইতিমধ্যে হার্ভার্ড এ কেমনে কেমনে স্কলারশিপ বাগিয়ে চলে গেছে এমেরিকা তে – ভাইবোন দুজনায় ওরা ভীষণ ব্রেনী । ওদের বাবা ও পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সব সময়ই ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়া ছাত্র । আমেরিকান পি এইচ ডি । মা আমাদের স্কুলের শিক্ষিকা । রাজু ওকে কখনো আপা বলে ডাকত না – আমাকে বলল ওকে নাম ধরে ডাকতে ।
এভাবেই ছটফট করতে করতে ই সাদ্দাম হোসেন মসজিদের মিনারেট এর চুড়ার মাইকে নিশস্তব্দটাকে ভেঙ্গে দিয়ে গেয়ে উঠল – আস সালাতু খাইরুম মিনান নার – আস সালাতু খাইরুম মিনান নার । কখন যে রাত পোহাইয়ে গেল অগোচরে তা বুঝতেই পারলাম না ।
বারো টার দিকে যাওয়ার কথা গুলশানে – যেয়ে তুলে আসলাম পাসপোর্ট সাইজের ছবি – ওদের লোক নিয়ে গেল এমেক্স গুলশান কনকর্ড টাওয়ারের নিচ তালায় – পাপিয়া নামের এক নম্র মহিলা আমার একাউন্ট খুলে দিলেন চোখের পলকে । পাসপোর্ট ফরম ফিল আপ কিন্তু কি তে আরামে শীতল পানিয়ও পান করতে করতে । সব ঠিক ঠাক বলল সব কিছু সময় মত হয়ে গেলে জুন মাসের ১ তারিখ ফ্লাই করবো – ঢাকা টু সিঙ্গাপুর বা ব্যাংকক হয়ে । আই ওয়ায ছোঁ এক্সাইটেড ।
দুপুরে চলে গেলাম আমার অতি প্রিয় দুই বন্ধুদের দেখতে ওদের অফিসে কিংশুক লিমিটেড এর অফিস মতিঝিলে – ওরা কাজ শেষ করে বের হলে একসাথে আড্ডা মারব কিছুক্ষণ তোপখানা রোডে হারুন ডাইরির উলটো পাশের নতুন আইসক্রিম পার্লারে । তারপর রিক্সায় ইন্টারকন এ একা একা – কাউকে না জানিয়ে ;
রিকশায় বসে বসে ভাবলাম ” এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি …… ৩০ দিন পর পারি জমাবো সেই স্বপ্নের সুদূর দেশ লিবিয়ার বেনগাজি তে – ওমর মুখতার লিবিয়ার ক্ষুদিরাম এর দেশে” ……………………

বেশ ফুঁর ফুঁরে আবহাওয়া ঢাকায় সেদিন ; পিন ম্যান ডি প্যারিস লণ্ড্রী টা পাড় হওয়ার পরি রিক্সা টা প্রেস ক্লাবের উল্টা পাশে দাড় করাতে বললাম - নেমে যেয়ে কয়েক টা জিনিস কিনে বললাম - পুলিশ কন্ট্রোল রুম - ঢাকা ক্লাব হয়ে শাহবাগ দিয়ে ইন্টারকন হোটেলে যেতে বললাম - তখনকার ঢাকায় জ্যাম নামক শব্দটি বাংলা ডিকসনআরি তে ঢুঁকে নাই । একদম খালি রাস্তা -আমি মনের আনন্দে রাস্তার দু পাশের নিওন বাতির আলোয় প্রজ্বলিত সাইন বোর্ড গুলো পড়ছি আর রিক্সা মসৃণ পীচঢালা পথ ধরে বেশ জোড়েই এগিয়ে চলছে ; নিমিষেই ঢাকা ক্লাব - নেমে যেয়ে একটা ধাউস জাতীয় সদ্য কেটে আনা রজনী গন্ধা কিনে এবার চললাম শাহাবাগ - পিজি হয়ে বামে সাকুরা কে রেখে হোটেলের বাইরেই রিক্সা বিদায় করে হেঁটে হেঁটে লবিতে ঢুকেই দুরে একটা সোফায় লাল ফুলেল স্লিভলেস ম্যাক্সি ড্রেশ পড়ে কথা বলছে আরেক জন মহিলার সাথে - আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়িয়ে বিদায় নিলো ঐ মহিলার নিকট থেকে - হেঁটে হেঁটে আসতে লাগল আমার দিকে লম্বালবির সেই শেষ প্রান্তে কিওস্ক এর সামনে থেকে বারের দিকে আসছে রেহানা - ওয়াও - একি অপরূপ ! লম্বা - গায়ের রং তামাটে মসৃণ স্লিকি , লাল ড্রেসে মনে হচ্ছিল যেন ফিগারের সিলহউটি টা অনেক টা তাবানি বেভারেযের কাঁচের কোঁকা কোলার বোতল টা উলট করে দিলে যেমন একটা গ্রীক ভাস্কর্য এর কার্ভ গুলো প্রতিমান হয় ঠিক তেমনি লাগছিল ওকে । চোখ ফিরানো দায় । এসে হ্যালো বলে - দুএকটা কথা বলেই - বলল চলো বাইরে সুইমিং পুলের পাশে যেয়ে আরামে ঠাণ্ডায় বসি চলো । আমার সেই চিরাচরিত হাঁসিটা দিয়ে অনুশরন করলাম ওকে । ম্যাক্সি ড্রেস থেকে নাকে আসে ধাক্কা খেল ওর পারফুইমের হাল্কা বাতাস - উপচে পড়ছে লাবণ্য - বেশ বেক্তিত সম্পন্ন রাশ ভারী ডিগনিফায়েড হাঁটাটা ; স্যান্ডেল পায়ের পাতা গুলো দেখে মনে হল যেন একেকটা পদ্ম ফুলের পাপড়ি ।
কাল থেকে আজ আরও বনরুপার অপরূপা লাগল । হাঁটতে হাঁটতে সুইমিং পুলের পাড়ের ঘাসের মধ্যে দিয়ে হেঁটে - স্কোয়াশ কোর্ট পাড় হয়ে রেডিও বাংলা এবং রমনা পার্কের পাশে ইন্টারকন গলফএর পাশের শেষ টেবিলে গিয়ে বসলাম । বাতাস বইছে মৃদু চারিদিকে সবুজ হোটেলের দালান আর রুম গুলোর জানালা গুলো দেখতে মনে করিয়ে দিল কবুতরের খাঁচার কথা । আসে পাশের সব টেবিল গুলো একদম খালি অনেক দুরে বসে আছে বাংলাদেশী পায়জামা আর ফতুয়া পড়া দুই মহিলা - মনে হল রাজশাহী বা মিরপুর এই জাতীয় কোন এন জি ও তে কাজ করে । ঢাকার গরম আর আবহাওয়ায় গায়ের রং ডিসকালার হয়ে সে এক ভিন্ন ধরনের গ্রেভেটি কালারে রাপান্তারিত হয়েছে আর পুষ্টিহীন খাদ্যের অভাবে হাড্ডিসার অবস্থা ওনাদের ।
ওয়েটার অর্ডার নিয়ে চলে গেল - ফুলের তোড়া টা দিলাম হাঁতে - আর পকেট থেকে বের করলাম ওর জন্য কিনা মুর মেন্থাল সিগারেটের প্যাকেট টা - আর আমি জিজ্ঞেস করলাম । মে অ্যাই ? হাঁতে নিলাম আসার পথে কিনা জাম্ব সাইজের হাভানা ছিগার ''লিগা প্রাভাদা '' মিষ্টি স্বাদের সুস্বাদু সিগার - তুষার দা'র দেওয়া রন্সন লাইটার দিয়ে আগুণ ধরাবার আগে সিগার টা আরামে টানবার জন্য একটু কেটে ফেললাম ওটার প্যাকেটে দেওয়া ছোট্ট ওয়ান টাইম ব্যবহারকারি জিলোটিন চাকু দিয়ে - আগুণ ধরিয়ে বেশ কয়েক বার পাফিং করে নিষ্কাসন করলাম ধূম্র প্রণালি - দারুণ টেস্ট - হাল্কা স্মোক - গাঁড় ধুয়া এবং মসৃণ - শ্বাস নিতে কোন বেগ পেতে হল না অন্যান্য সিগারের মত মনে মনে ভাবলাম ১০০ টাকায় একটা সিগার এর দাম দিলে এইরকমই হয় । মুর এর প্যাকেট থেকে ওকে একটা বের করে দিয়ে আগুণ সংযোজন করে দিলাম আমি নিজেই - এতক্ষণে বুঝলাম সে এমেচার নয় - চা এলো বৈকালীন স্নাক্স - ক্লাব ছেনডুইছ - পেস্ট্রি ( আমার অতি প্রিয়) - কেক আর বিশাল নিকলাই অস্ত্রভস্কির ইস্পাত গল্পের সাইজের সামোভার আর মত বিশাল দুই দুই টা চায়ের টি পট - দুই দিনেও পান করে শেষ করা যাবে না । 
অনেক অনেক ধরনের গল্প করছিলাম - ওর জীবন ওর কথা - আমার জীবন এর সেই হারানো পাণ্ডুলিপি গুলো একত্রে শন্নিবেশন করে উপস্থাপন করে বেশ বাহবা দিলাম নিজেকে - অনেক প্লুটোনিক আলোচনা - কবিতা আবৃতি - আমার মোটা গলার স্বর আমি নাকি আর্টিফিশিয়াল - আর জোড়ে জোড়ে হাঁসি - অনেক দিন পড় মন টা খুলে হাসলাম ; কিন্তু দুই ই দুই মিলছিল না - ওর কথায় কথায় জানি একটা মেলাংকলি লুকিয়ে আছে তা অনুভূত হোল । 
আজকে আমি ট্রাজেডি তে অবগাহন করতে চাই না - আশ্চর্য হলাম ও আমাকে এক বারও জিজ্ঞেস করলো না আমি কি করি - খুবই অন্যরকম মনে হোল । নিজের অজান্তেই বার বার ওর হাঁসিটা উপভোগ করছিলাম । আমিও বেমালুম চেপে গেলাম ওমর মুখতারের দেশে যাওয়ার কথা । কাপের পর কাপ চা পান করেই চললাম । সিলেট - খাদিম নগর - কুমিল্লা কোটবাড়ি হয়ে এবার ঢাকায় সব অলি গলি তে ভ্রমণ করলো আমাদের গল্প । আমি শ্রোতা - আর ও ঘোষক ।
কেন জানি মনে হল ওর পারিবারিক একটা অতীত আছে বা ঘটেছে যা' আমি জানিনা এবং ও আমাকে বার বার বলতে চাচ্ছে - বেশ জোড়ে হাওয়া বৈতে লাগল - হাওয়া এপ্রিল এর শেষ সপ্তাহের এক বিশাল কাল বৈশাখী তে রূপ ধারণ করলো মুহূর্তে - বড় বড় তাল গাছ গুলো হাওয়ায় কাপতে লাগল । কালো মেঘে দেখে গেল ঢাকার আকাশ মুহূর্তের মধ্যে ।
এক দৌড়ে সবাই স্কোয়াশ কোর্ট - পুল এলাকা ছেড়ে লবিতে ঢুঁকে গেল - লবিতে আমরা দৌড়ে এসে দেখি তিল ধারণের জায়গা নাই - লোকে লোকারণ্য - পুরা সেটিং আর রোমান্টিক মুড টাই ধূলিসাৎ হয়ে গেল । ভাবলাম কপালের নামই গোপাল ।
ভিড় আমি একদম পছন্দ করি না - বললাম এই আমাকে চলে যেতে হবে - ট্রেন্সলেসন আছে অনেক গুলো কাগজ - কাল বিকালে ডি এইচ এল এ পাঠাতে হবে - তখন জিজ্ঞেস করলো আমি আসলেই করি টা কি - আমার কাহিনী দুই মিনিটে ছয় বছরের গল্প বেমালুম বলে দিলাম নিরধিধায় । নিজেই নিজের বাগ্মিতায় আমি নিজেই আভিভুত হয়ে গেলাম । বলল এই খারাপ ওয়েদার এ যাবা কেমনে - লবীর বাইর এ এসে দেখি ঝরের তাণ্ডবঅতায় ঢাকা লণ্ডভণ্ড ; শাকুরা বারের পর্যটনের নিয়ন বাতি পেন্ডুলামের মত ঝুলছে - বাবু সারয়ার এর পেট্রল স্টেশন চুরমার - মিনটো রোড ই কেবল আলোকিত মন্ত্রী পারা বলে ; বাকি ঢাকা দশ - থেকে বিশ মিনিটের ঝড়ে -কাতর ''ঐ নতুনের কেতন উড়ে কাল বৈশাখীর ঝড় - তোড়া সব জয়ধ্বনি কর ''।
আস্তে করে কানের কাছে মুখ এনে বলল এখানে আমার বস রা সব বসে আছে - কাল সন্ধ্যায় আমার ফ্লাইট - লেটস গো টু মাই রুম - প্লিজ ফলো মি .....................। 
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি মাত্র রাত নয় টা বিশ মিনিট - হাতে চক চক করছে টাইটান নতুন ঘড়িটা - টাটা'র বানানো - টাটা কোম্পানি নামটা আমার খুবই পরিচিত - আমার মা'র ছোট্ট মামা টাটা কোম্পানির মহা হিশাব রক্ষক ছিল টাটার জামসেদ পুর ষ্টীল নগরীতে - পৃথিবীর অন্যতম নাকি ভালো কোম্পানি মা বলত সব সময় - তাঁর মামার ছেলেরা আর এখন মায়ের মামাত ভাইয়ের দুই ছেলে এবং এক মেয়ে কলকাতা টাটা তে চাকরী করেন - বংশানুক্রমিক চাকরীর সুযোগ - ওরা তিন ভাইবোন ই কলকাতা যাদবপুরের আই আই এম থেকে এম বি এ । পড়া শেষ করার আগেই টাটা চাকরী অফার করেছে ওদের তিন জনকে - মা সব সময় গল্প করত - জামশেদ পুর ওদের বাংলো - ওখান থেকে ট্রেনে দার্জিলিং আসার পথে রাঁচি তে অবকাশ যাপনের কথা । তাজ হোটেলের শপে অনেক ঘড়ির মাঝে দেখলাম টাইটান অটোমেটিক স্কয়ার ফেস ঘড়ি দেখে সঙ্গে সঙ্গে সবচে হাঁই স্পেক ঘড়িটা কিনে ফেললাম । এই ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই হেঁটে হেঁটে অগ্রসর হতে থাকলাম বারের বাম দিকের লবির শেষ প্রান্তের লিফটের দিকে বাটন টিপে ধরে আমার যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে সে ............ মৃদু পায়ে সন্তর্পণে প্রবেশ করলাম লিফটে - সূই করে উঠতে লাগল উপড়ে - থামল আট নয় কি সাত নম্বর তলায় - বের হয়ে করিডরের শেষ রুম আজও এত বছর পর আবছা আবছা মনে আছে - রুম নম্বর ৮১৯ ।
চাবি টা দিয়ে দরজাটা খুলল সে আমি ওর পিছনে পিছনে ঢুকেই বসলাম সোফা চেয়ারে - ও বলল তুমি বস আমি এখুনি আসছি - আগের রাতে ঘুম নাই - বোম্বে তে কয় রাত হয়নি একদম ঘুম - চেয়ারে বসার সাথে সাথে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম তা আজও জানিনা......


সকালে পুবের আকাশের রোদ হোটেলের জানালার ভারী পর্দার ভিতর দিয়ে কিভাবে যে রশ্নি প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছিল জানিনা কিন্তু ঐ সূর্যের আলোয় ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমি সূয়ে আছি বিছানায় কখন কিভাবে কেমনে যে রাত শেষ হল আর সকাল হয়ে গেল কিছুই জানিনা ।
বাথরুম থেকে বের হয়ে এলো - সদ্য স্নাত - ভিজে চুলের ডগায় শিশিরের বিন্দুর মত জল যে কোন মুহূর্তে বৃত্ত চ্যুত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আত্মত্যাগ করবে; হ্যালো বলে বলল তুমি এখনো সেই ৭২- ৭৩ এর মুন্নাই রয়ে গেছ । আমি বললাম তাই ! বললাম যেতে হবে ফিরে নীড়ে - ও বলল আমার পিক আপ পৌনে তিনটায় - ব্রেকফাস্ট অর্ডার দেই - হেভ সাম ব্রেকফাস্ট দেন গো । হুম্মম্মম - ক্যান ডু ইট আমি বললাম ।
আধো আধো ঘুম জড়ানো ভারী গলায় বললাম এক কাপ চা খেলে সজাগ হওয়া যেত - বলল দাড়াও চুল ঠিক করে বানিয়ে দিচ্ছি -
মনে মনে ভাবলাম - আমার মঞ্জিলে মকসুদ অনেক দুর - উল্কা ট্রেনের গতিতে যেতে চাই আমি - উল্কা জাতীয় ট্রেনরা শুধু শুধু এই সব সশরদি -চিনকি আস্তানা - বড়াল ব্রিজ বা মনতলা জাতীয় ছোট্ট স্টেশন এ থামে না - কেনই বা আমি সব ছোট্ট স্টেশনে থামবো ।
কি এই মোহ - কি তাঁর ব্যাপ্তি - কেন এত প্রকট এর পরিধি ? সঙ্গ টা সুহৃদ কিন্তু এলাসটিক রাবার ব্যান্ড এর মত এটাকে টেনে এক্সপানড করে লাভ নাই মুন্না বাবু । বাংলাদেশে তখনও আমার মত এই ধরনের রিস্ক নেওয়া পাবলিক অনেক অপ্রতুল ছিল - যখন আমার সম সাময়িক রা মেয়ে দের সাথে রিক্সায় উঠতে নয় বার চতুর্দিকে অবলোকন করে নিত - বিজ্ঞ একজন গোয়েন্দার মত করে - আর আমি ?
হারিয়ে গেলাম নিজের বোনা চিন্তার মাকড়শার জালে - আর আধো চোখ বুজে উপভোগ করছিলাম ওর চুল শুকানোড় দৈহিক এক্রবেটিক কসরত - পরনে শুধু সাদা বাথ রোব । অল্প এক গুচ্ছ বব কাট চুল কালো ঝকঝকে সিল্কি - খুবই মানাসই চুলের কাট - বললাম তোমার হেয়ার ড্রেসআর কে - এবার আমার চুল যখন তোমার মত সাইজের হবে তখন ওর কাছে যেয়ে আমার চুল টা ও কাটাবো - লাইক ইয়োর হেয়ার কাট - আসলেই আমি সব সময় ই মেয়েদের ছোট চুল পছন্দ করি । ইতিমধ্যে চা নিয়ে নিয়ে আমার পাশে এসে বসল - বলল আবার কবে দেখা হবে - তুমি এত সুন্দর করে কথা বল - আমি আরও শুনতে চাই তোমার গল্প । বললাম আমার ৯৫% গল্পই কিনতু গল্প । দুজনাই একটু হাসলাম - নিজেদের অজান্তেই আমারা দুজন কখন যে একটা বন্ধুত্বের সখ্যতা গড়ে তুলেছি নিজের মধ্যে তা আমারা দুজনের কেইই উপলব্ধি করতে পারি নাই ।
একটা বইতে পরেছিলাম - ''প্রক্সিমিটি মেইক্স লাভ গ্রো '' - অনেক বাধা ভেঙ্গে জরিয়ে ধরলাম কাছে - গলিত মোমের মোলায়েম অনুভূতি । জানিনা কতক্ষণ ছিলাম ওভাবে - । রুম সার্ভিস ব্রেক ফাস্ট নিয়ে মৃদু টোকা দিল দরজায় - উঠে যেয়ে নিয়ে আসলো ব্রেকফাস্ট ট্রে - আমি উঠে চট জলদি হাতমুখ ধুয়ে ব্রেকফাস্টে মিলিত হলাম । নাস্তা করে বললাম এবার উঠি অনেক কাজ - পাশে রাখা প্যাডে আমার ঠিকানা খশ খশ করে বল পয়েন্ট পেন দিয়ে লিখে দিলাম আর দিলাম আমার টেলিফোন নাম্বার টা - ভাগ্য ভালো ফইসু আলী টি এন টি অফিসের তাজুল সাহেবের সাথে পরিচয় করে দেওয়াতে তেজকুনি পাড়া অফিস খুব তারাতারি ফোন লাইন টা দিয়ে দিয়েছিলো - আজ ও আমি রবিন আর ফইসু'র কাছে চির কৃতজ্ঞ । হাত টা ওর কাঁধে রেখে বাম হাতটা ওর গালে ছোট্ট করে বুলিয়ে দিয়ে এক ধরনের তাড়াহুড়া করেই বিদায় নিচ্ছিলাম - ও বলল দাড়াও বাবা - আমি ফ্লাইট না থাকলে মা'র সাথেই থাকি - তুমি তো চিনো বাবা মারা যাবার পড় থেকে মা বড় একা - ৩২ ৪৬ - - নাম্বার আমি ফিরব ঢাকা - কলকাতা - লন্ডন - ঢাকা মে মাসের ৭ তারিখে - তারপর ছুটি আমার বার্থ ডে করে ফিরবো কাজে ৩০ ই মে - বললাম আমারও বার্থডে মে মাসে - বলল তাই - বললাম যুদ্ধের পর তোমার সাথে যখন আমার পরিচয় তখন সময় টা বার্থডে করার মত সময় ছিল না - রে' - নিজের অজান্তেই রেহানা শর্ট হয়ে ''রে '' মানে রশ্মি বলে ডাকতে লাগলাম । বলল ও কে - দুজনার জন্মদিন এক সাথেই করবো তাহলে আমার ২৫ আর রে ' এর ২৭ মে - ওয়াও - কি কোইন্সিডেনট - । ওর মুর সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা বের করে বললাম হেই আই হেভ টু গো রে' ।। বলেই দরজাটা খুলে ধরলাম ও উঠে হ্যান্ডসেক করলো আর বলল গুড বাই - মুন্না - দেখা হবে । ওয়ান রিকুয়েস্ট কিপ ইট এ সিক্রেট - । বললাম হোআই - তুমি কি লজ্জিত আমার সাথে মিশতে ? ইফ ছো - দেন আই ওয়ুড নট বদার নেক্সট টাইম - বড় বড় চোখ গুলো ছোট্ট করে ফেলল নিমিষে - একে বারে সিনেমার মায়া হাযারিকা'র মত আর বলল - পরে সব বলব ফোনে - চা পান করার সময় ওর কথায় কোথায় যেন একটা মেলাঙ্কলি অনুভূত হয়েছিল - আর এখন ওর চাহনিতে দেখলাম সেই একই মেলাঙ্কলিক শুন্যতা ।
কড়া রদ্রু - স' ওয়ালেসার হেড অফিস পর্যন্ত - গ্লাক্স অফিস পাড় হয়ে হাঁটতে থাকলাম - জানি না কেন - ভাবলাম আমার একটু মাথাটা হাল্কা কড়া দরকার কিছুক্ষণের জন্য - বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র জাতীয় - শিশু ভাইদের বাড়ির কাছে একটা সাইন বোর্ডের এর নিকট - আবু সায়েদ চৌধুরির বাড়ির উলটো পাশে ওখান থেকে রিক্সা নিয়ে রউনা দিলাম আমার গন্তব্যে ............... ।
কেন জানি মনটা বলতে লাগল - শি ঈজ টু গুড টু বি ট্রু............... । আমার সিনিয়ার জে সি ও হাবিব সাব এক বার আমাকে বলে ছিল - স্যার ...... সব সময় ফায়সালা জারি রাখিয়েন - ভাবলাম কথাটা উনি মন্দ বলেন নাই -
নিজের স্বার্থেই আমাকে ও ফায়সালা জারি রাখিতে হইবে - যদিও খুবই কষ্টসাধ্য হবে ওটা - কারণ এই প্রথম আমি কারো সাথে কথা বলে আনন্দ পাই এন্ড শি ইজ ফান টু বি উইথ .........



টু বি ওর নট টু বি দ্যাট ইজ দি .................

  • This is a work of fiction. Names, characters, businesses, places, events, locales, and incidents are either the products of the author’s imagination or used in a fictitious manner. Any resemblance to actual persons, living or dead, or actual events is purely coincidental.

Comments