১৯৭১ সাল -সাদা পোশাকধারী রাজাকার কাহিনী

১৯৭১ সাল ৩১ শে অক্টোবর - সাদা পোশাকধারী রাজাকার কাহিনী 
আমাদের পারিবারিক বন্ধু ডি এস কাকার ছেলে হেলাল ভাই এক অকুতোভয় ২১ বছরের মুক্তি যোদ্ধা - মেলাঘর থেকে ট্রেনিং নিয়ে তার দলের সাথে ঢাকায় আগমন। 
বারো দিনে নয় টা অভিযান এক ধূর্ধর্ষ মুক্তি সেনা আমাদের হেলাল ভাই - ওয়াইজ ঘাটে বোমা ফাটানো - মগবাজারের ইলেট্রিক ট্রান্সমিটার উড়িয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে রাতের বেলা নৌকায় করে জিঞ্জিরা থেকে বোমা - অস্ত্র - গুলি নিয়ে আসা সঙ্গে নতুন মুক্তিদের ঢাকায় প্রবেশ করানো তার নিত্য নৈমিত্তিক কাজ। 
রামপুরায় রোডে এক পরিত্যাক্ত টিনের গুদামে রাত কাটাতো হেলাল ভাই - বলিষ্ঠ - পেটানো শরীর- জিম খানায় সব সময় ব্যায়াম করা শরীর। টি এ রোডের বাসায় রিং করা - ইটের উপর হাত রেখে এক টানা ১ শত বুক ডন - আমার কাছে স্বপ্ন মনে হতো - এক বিশাল হিরো ছিল আমাদের হেলাল ভাই। তুখোঁড় ছাত্র মেট্রিক এ চারটা লেটার নিয়ে পাশ - ডাক্তার হবার প্রবল অভিলাষ তার ছিল - একাত্তুর কালো অধ্যায় ছিন্ন ভিন্ন আশা - জীবন। 
এক রাতে সাদা পোশাক পড়া রাজাকার এসে ঘিরে ফেললো ওনাদের ওই আস্তানা কে - ভারী বুটের আওয়াজ - এগিয়ে আসলো বন্দুক তাক করে এক ডজনের ও বেশি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী - ধরে নিয়ে গেলো ওরা চার জনকে। 
ঢাকা জেলে ৩১ শে জানুয়ারী ১৯৭২ সালে তাকে পাওয়া গেলো জেলের হাসপাতালে বোবা - হাতের� বুড়ো আঙ্গুল কাটা দুটোই - সারা শরীরে চাবুকের আঘাতে কালো ক্ষত পোড়া পোড়া দাগ। 
কেই তাকে চিনতেই পারে নাই - সবাই মনে করেছিল সে হয়তো কোন যাবৎজীবন পাওয়া আসামি। 
কত হেলাল রা যে এভাবে রাতের আঁধারে রাজাকার দের হাতে ধরা পড়েছে বা রাজাকাররা ধরে নিয়ে গেছে - কত জনকে গুম করে হত্যা করে লাশ ফেলে দিয়েছে তার কোনো হিসাব - তথ্য - পরিসংখ্যান নাই আমাদের - কত প্রাণ দিলো বলিদান। 
স্বাধীনতা তুমি আসোনি খুব অল্প দামে ? 
বহু হেলাল ভাইদের জীবনের বিনিময়ে - 
হেলাল ভাই তার পর আর কখনো একটি বাক্যও উচ্চারণ করতে পারে নাই- পাকিস্তানিরা ওনার জিব্বা তা কেটে ফেলেছিলো বেশি বেশি প্রতিবাদ করতো ওদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে। 
জানিনা আজ কোথায় আছেন আমাদের সেই প্রিয় হেলাল ভাই - জীবিকার অন্নেষনে ঢেউয়ে ঢেঊয়ে অনেক সাগর পাড়ি দিয়ে স্মৃতি চারণ করছি আর ভাবছি - ওঁদের কে আমরা কি দিয়েছিলাম যথাযোগ্য মর্যাদা ? 
হেলাল ভাই তুমি আজও অটুট মোর স্মৃতিতে - লও মোর রাতুল প্রণাম

Comments