শান্তি বাহিনীর সাথে কয়েকটা দিন

শান্তি বাহিনীর সাথে কয়েকটা দিন

গান গাওয়া শেষ - কি অপূর্ব ওর গলার আওয়াজ মনোমুগ্ধ হয়ে গেলাম।  হঠাৎ কেন জানি শরীরের রোম শিউরে উঠলো , একটা ভয় আমাকে কেন জানি বিচলিত করে তুললো মনের অজান্তে।  অসংলগ্ন সব চিন্তা আসতে লাগলো - একটু ঘাবড়ে গেলাম - ভয় টা লাগলো - কি হবে আজ রাতে যদি আর্মি এই শান্তিবাহিনীর কেম্পটা দখল করে ফেলে আক্রমণ করে আর আমাকে যদি দেখে এখানে , কি বলবো ওদের ; আর ওরাই বা আমাকে কি কি সব প্রশ্ন করবে বা করতে পারে।  বিচলিত ক্ষনিকের জন্য।

লুম্বিনী আমার পাশে গাছের একটা গুঁড়িতে হেলান দিয়ে অর্ধ শুয়া - কেই কোন কথা বলছিলাম না ;  সিগারেটে একটা সুখ টান মেরে পানিতে ছুড়ে মারলাম অবশিষ্ট অংশটুকুকে।  আড়মোড়া ভেঙে ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও চোখ বুজে শুয়ে আছে , মনে হচ্ছিলো যেন গ্রিক পুরাণের শিকারের দেবতা '' ডায়ানা '' শুয়ে আছে আমার পাশে -একা - নিভৃতে - দুধে আলতায় মিশ্রিত রং ওর গায়ের, দীর্ঘ গ্রীবা, পাকা টস টসে রসে পরিপূর্ণ ঠোঁট গুলো ; আদিবাসী হলেও অনেক দীর্ঘাঙ্গী - লাল ব্লাউজ আর লাল আর কালো চাকমা  সারং পরনে।  তারুণ্যে উদ্দীপ্ত - কর্মঠ - সটান একটা অস্পরা।  মনে হলো ওর পা গুলো এঞ্জেলের মতো নাচছে আর ঠোঁট গুলো কেঁপে কেঁপে উঠছে সুরের মূর্ছনায় আমার কল্পনায়।

ভয় নিমিষেই উড়ে গেলো রোমান্টিক ভাবনার ক্লাইমেক্সে।  বিপদ আসলে দেখা যাবে - এখন ঐসব ভাবনা ফালাও।  আস্থে পাশ ফিরে হাত দিয়ে ওর কপালে পরে থাকা অবিচ্ছিন্ন কয়েক গোছা চুল গুলো সরিয়ে দিলাম ; এই বৈরী পরিবেশেও ওর ত্বক কি মসৃন - রাজশাহী সিল্কের মতো ; হাতের পাতা দিয়ে অনুভব করলাম ওর ডিম্পল সমৃদ্ধ গল্ গুলো; ও ওর হাতটা দিয়ে স্পর্শ করলো আমার হাত।


আমার মুখটা এগিয়ে গেলো ওর দিকে - নিজের অজান্তেই কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম ওর নিঃস্বাশের উষ্ণতায়।  সে যে কি এক স্বর্গীয় অনুভূতি - ঘাসের আর ঘামের সোদা গন্ধে হারিয়ে গেলো সব - সহসা ভেঙে যেন ফারাক্কা বাঁধ; ইমোশনের বন্যা বয়ে গেলো ঐ  দুই যুবক আর যুবতীর একান্ত সান্নিধ্যে।  নিষিদ্ধ ফল গাছ থেকে পেড়ে খাওয়ার স্বাদ ই যেন ভিন্ন।  প্রকৃতির শীতল ছায়াতে আড়াল এই নিশ্তব্দ ঝর্ণার পানির কলতানে একাকার আমরা দুজন।

সন্তর্পনে উঠে এলাম পাহাড়ের পাদদেশ থেকে উপরে ঘরের দিকে একা একা - সকলের চোখ এড়িয়ে - ভয় টা আবার মাথায় মাথাচাড়া দিয়ে উঁঠলো কেন জানি - অজান্তে।


ঘরে ঢুকতে যেয়ে দেখি জনি আর আর একজন বসে বসে কাঁঠাল খাচ্ছে - বসে পড়লাম ওর সাথে কাঁঠাল খেতে - আর বললাম ওকে আমার ভয়ের কথাটা - অনেকক্ষন  ভেবে চিন্তে বললো পরশু সকালে আমরা ফিরে যাবো - আমাকে বেশ স্পষ্ট ভাবেই শাসন করার মতো করে বারণ করে দিলো আর বললো - শোন - এই কেম্পের কথা জীবনেও কাউকে বলিস না - তোকে আমি বিশ্বাস করি তাই নিয়ে এসেছি।  আমার সরলতার সুযোগ নিস্ না কখনো।  প্রতিজ্ঞা করলাম ভঙ্গ করবো না ওর অনুরোধ বা ওর আদেশ।

আস্তে আস্তে বললাম - থাকা আর খাওয়া আর কয়েক শ' মাইল হাটা ছাড়া আমি তো আর কিছুই জানতে পারি নাই।  বললাম আমি জীবনে অনেক বড় একটা যুদ্ধ দেখেছি - যুদ্ধ- হত্যা - নির্যাতন - শরণার্থী এইসব আমি ঘৃণা করি মনে প্রাণে।  আমি খুবই অনুসন্ধিৎৎসু মনের মানুষ।  আমি বিপদ নিয়ে খেলতে ভালোবাসি - বিপদ - ভয়ংকর জীবন - এডভেঞ্চার - রোমান্স - সাসপেন্স আমাকে সব সময় হাতছানি দিয়ে ডাকে আর আমিও ওসবের দিকে ধাবিত হয় অনায়াসে।  তোর গ্রূপের সকল গোপনীয়তা আমার নিকট অত্যন্ত মূল্যবান - আগামী ত্রিশ চল্লিশ বছরেও কাউকে  বলবো না।

স্বাধীনতা সকল মানুষের জন্মগত অধিকার - কারোর মুক্তিসেনা অন্যের কাছে দুস্কৃতিকারী - আমার এতে কিছুই আসে বা যায় না।  কিন্তু আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি অস্ত্র ই সকল অধিকার আদায়ের শ্রেষ্ট পন্থা নয়।  ভীষণ ক্লান্ত লাগছিলো - বললাম জনি আমি যাই একটু রেস্ট নিবো আর আন্দেজ পাহাড়ের চূঁড়ায় প্লেন দূর্ঘটনা আর ওই সব প্লেয়ার দেড় গল্প টা আজে পরে শেষ করবো - অনেক দিন যাবৎ বিচিত্রটা নিয়ে ঘুরছি কিন্তু পড়ে শেষ করতে এখনো শেষ করতে পারি নাই।

জনি জিজ্ঞেস করলো খাবি না ভাত আর  সিঁদল  , বলতে বলতে ও তার পাশে রাখা দো  চোয়ানি পূর্ণ গ্লাসে একটা বিশাল চুমুক দিয়ে গলধঃকরণ করলো আধা পাইন্ট মদ।  আমি আস্তে উঠে হাটতে শুরু করলাম আমার রুমের দিকে।  পিছনে শুনতে পেলাম ওর বিরাট একটা ঢেঁকুর।


চুরি চোখে খুজলাম লুম্বিনীকে - কোথাও ওর টিকি টিও দেখতে পেলাম না - ধপাস করে শুয়ে পড়লাম  বিছানায় আর ধরালাম আমার সেই প্রিয় ষ্টার সিগারেট - আর ভাবতে লাগলাম - এই সিগেরেট খেয়ে খেয়েই আমাকে জীবনে অনেক দূর পৌঁছাতে  হবে। ........... আবার ভয়টা যাতে না এসে মাথায় চাপে তাই সঙ্গে সঙ্গে বিচিত্র ম্যাগাজিনের লেখা আন্দেজ পর্বতের সেই প্লেন দুর্ঘটনার গল্পে মনোনিবেশ করলাম অতি সত্তর।  .....চলবে


  • This is a work of fiction. Names, characters, businesses, places, events, locales, and incidents are either the products of the author’s imagination or used in a fictitious manner. Any resemblance to actual persons, living or dead, or actual events is purely coincidental.

Comments