কোথায় যে সেই জেন্টলম্যান ; আজ খুঁজছি ? A reminiscence of My days in Uniform ; by Imran Chowdhury of Northampton - UK

কোথায় যে সেই জেন্টলম্যান ; আজ খুঁজছি ? 


​১৯৮৬ সাল ​ ফেব্রুয়ারি মাস ছিল ওটা (মনে হয়) - আমি বাংলাদেশ আর্মিতে - ১৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এডজুটেন্ট স্বভাবতভাবেই: রাত বিরাত  উজাগর করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কোর্ট অফ ইনকোয়ারি - স্টক টেকিং- ট্রেনিং বছরের ট্রেনিং প্রোগ্রাম লেখা অথবা জাস্ট প্রাত্যহিক রেজিমেন্টের এডমিনিস্ট্রেশন চালানোর কাজে ব্যস্ত রাত প্রায় সাড়ে আট  টা  পর্যন্ত। এডজুন্টেন্টের অফিস ঘরে বসে আছি - অতীব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা লিখছিলাম - সহসা ক্রিং ক্রিং করে টেলিফোন টা বেজে উঠলো - তার কিছুক্ষন আগে আমি ডিউটি ক্লার্ক রফিক বাবুকে ডেকে বলেছিলাম টেলিফোনে টা  যাতে উনিই ধরেন।  কিন্তু অনেক গুলো রিং বাঁজছে অথচ কেই ধরছে না তাই - অনেক টা বিরক্ত হয়েই দূরালাপনীর যন্ত্র টা  উঠালাম। 

যথারীতি নিজের আত্ম পরিচয় বাহবার সাথে প্রকাশ করত: অপেক্ষা করলাম ওপর পারে আওয়াজের অপেক্ষায় - একটা  অতি নম্র ভদ্র গলার শান্ত একটা মৃদু পুরুষের গলা শুনতে পেলাম  - 

অনেক চিন্তিত এবং বিষন্ন মনে হলো ওনাকে - আমাকে জিজ্ঞ্যেস করলেন আমার কোর্স এবং রেঙ্ক এবং আমার পল্টনের পদবি কি ইত্যাদি। 

খুবই দুঃখিত  - নিরুপায় এবং অত্যন্ত বিনীত উনি - আজ ও সেই ত্রিশ বছর পরও  - মনের সেই শব্দের আর্কাইভে রেকডিং টা ভেসে উঠছে। 

কলার কে প্রশ্ন করলাম - কি করতে পারি আমি ওনার জন্য -

ওপর প্রান্তের ঐ কলার বললেন - ভাই ইমরান - আমি খুবই মর্মাহত এবং চিন্তিত - তোমাদের ফিল্ড মেসে আমার একটা বিল বাকি আছে এবং তোমার সহ অধিনায়ক বেশ একটা কড়া ভাষায় চিঠি দিয়েছেন কিন্তু আমার তো এখন এই এই কারণে ৭ দিনের মধ্যে চেক পাঠানো সম্ভব নয়।  তুমি ওনার সাথে একটু কথা বলে - আমার অনুরোধ টা  ওনাকে জানাতে পার বে ? যাতে আমি আরো দুই সপ্তাহ সময় পাই - কারণ উনি  বললেন উনি পার্বত্য এলাকায় যুদ্ধ এ  ব্যস্ত।

বললাম স্যার কত টাকার বিল বকেয়া আছে ? বললেন সামান্য তিন শ কয় টাকা - আমি একটু চিন্তা করে ভাবলাম - আহা রে - কি একজন ভদ্র মানুষ এবং খুবই ভারাক্রান্ত - ভয়ে - কি জানি আবার কিনা হয় - সামান্য কয় টা টাকার জন্য। 

উত্তরে বললাম - স্যার আপনি কোনো চিন্তা করেন না - আমি দিয়ে দিবো আমার পকেট থেকে আপনি পারলে সময় হলে আমাকে পাঠিয়ে দিয়েন - যদি পারেন - সময় যদি হয়। 

উনি কখনও ভাবতেই পারেন নি এটা আমি উপযাচক হয়ে ওনাকে উপহার দিবো - চিঠির ভাষার ভয় থেকে স্বস্তি ! 

ভীষণ আনন্দিত এবং রিলিভ পেলেন বলে মনে হলো- অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং ব্লেসিং ও দিলেন - প্রতিজ্ঞা করলেন অতি সত্তর পাঠিয়ে দিবেন - আমি কৃতার্থ হয়ে বললাম স্যার - যখন পারেন তখন পাঠিয়ে দিয়েন।  আমাকে অনেক অনেক আশীর্বাদ দিলেন উনি।  

যাহা বলা তাহাই কাজ  - বেল টিপে রানার দুলাল মিয়া কে বললাম একাউন্ট ক্লার্ক সাত্তার বাবুকে সালাম দেবার জন্য - দশ - পনেরো মিনিটি আগেই ওনাকে দেখেছিলাম তার কোনার অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘুপটি মার্ক রুমে বসে আধো আলো আধো অন্ধকারএ  কাজ করছেন - একজন অতন্ত ভদ্র - পরিষ্কার পরিছন্ন মানুষ ছিলেন হাবিলদার ক্লার্ক সাত্তার - আসলো আমার অফিসের সামনে এসেই সেই স্বভাবসুলভ মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললেন স্যার আসবো ?

ওনাকে সব খুলে বললাম এবং বললাম ঐ বিলটা ওনার নাম থেকে কিভাবে চেঞ্জ করে আমার নামে করা যায় ;

আমি বললাম আমি পে করবো এই পয়সা - ওনার নাম বকেয়া লিস্ট থেকে কেটে দিতে কি করা লাগে তা যেন কাল সকালে টুআইসি সাহেবের সাথে বুঝে করে ফেলেন ।  বললাম ঐ সাহেবের আর যেন কোন প্রেম পত্র পাঠানো না হয়।  আমাদের মহা সহ অধিনায়ক মেস বিল আর পিটি প্যারেডে দুই মিনিট লেট বা বিল দিতে একমাস দেরী হলো মুহূর্তের মধ্যে দুর্গা পূজার মণ্ডপের সেই অশুরের রূপে আবর্তিত হতেন কিন্তু গরীব লেফটেন্যান্ট রা যখন রাত দশটা পর্যন্ত অফিসে বসে কাজ তার জন্য কখনো বাহবা দিতেন না।  কি বিচিত্র ঐ সহমর্মিতার বেদি - যেখানে কামারাদ্দারী নামক শব্দটা নিছক ছিল একটা বুলি- বাস্তবে দিল্লী দুরস্তি।  

তারপর - ঘটনার যবনিকা। 

নাম টা  ঐ কলারের  একদম মনে নাই - ইতিমধ্যে বগুড়ার প্রসিদ্ধ করতোয়া নদীর জলরাশি অনেক  দূর গড়িয়ে গেলো একদিন ঐ স্রোতে ভেসে ভেসে আমিও খোকা বাবুর মতো প্রত্যাবর্তন করিলাম।  

জানিনা আদৈ কি কোনো চেক উনি আমাকে পাঠিছিলেন কি না - না পাঠানোটাই স্বাভাবিক কারণ আমি বারণ করেছিলাম যদিও উনি বার বার উপযাচক হয়েই বলেছিলেন অব্যশই আমার এই উদার  ঋন শোধ করবেন।  

জানিনা উনি আমার এই লেখাটা কি কোনোদিন দেখবেন বা পড়বেন - ভাবলাম অনেক অফিসারই আজকাল সামাজিক হয়ে গেছেন সামাজিক মাধ্যমের  কৃপায়। 

যদি আপনি  ই সেই দূরালাপনীর কলার - তাহলে যোগাযোগ করলে; বাধিত হবো - ভুলে যান সেই অথর্নৈতিক অঙ্ক। 

অনুগ্রহ: যোগাযোগ করুন - আপনিই যদি সেই আপনি ?

Comments